পুজোয় অন্তত নিজের গড় ধরে রাখলেন তিনি।
তাঁর খাসতালুকে সিঁধ কেটে গত কয়েক মাসে কার্যত ফাঁকা করে দিয়েছে। একের পর এক পুরসভা এমনকী নিজের কেল্লা বহরমপুর পুরসবাও হাতছাড়া হয়েছে, হারিয়েছেন জেলা পরিষদও। যা দেখে অনেকেই মনে করেছিলেন, পুজোয় উদ্বোধনের তালিকা থেকেও এ বার হারিয়ে যাবেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
তবে, দেবীপক্ষ পড়তেই মালুম হয়েছে, ধারনাটা বেমালুম ভুল— গত বারের মতো এ বারও বহরমপুরের ১৪টি পুজো উদ্বোধনে তাঁর নাম।
যার মধ্যে পঞ্চমীর দিনেই রয়েছে দশ-দশটি উদ্বোধনের আব্দার। ষষ্ঠীর দিন চারটি। যা দেখে সদ্য দলত্যাগী এক কংগ্রেস নেতাও কবুল করছেন— ‘‘দেখুন আমরা, জনপ্রতিনিধিরা দল বদলেছি রাজনৈতিক স্বার্থে। তবে, মানুষ যে এখনও অধীরদার সঙ্গেই রয়েছেন, পুজোয় ফিতে কাটার আব্দার দেখেই তা মালুম হচ্ছে।’’
লালবাগ থেকে হরিহরপাড়া— তালিকাটা বাড়তেই পারত। অধীর বলছেন, ‘‘আসলে এ বার কলকাতারও বেশ কয়েকটি পুজো কমিটি উদ্বোধন করার জন্য ডেকেছেন। না করতে পারিনি। আমাকে আমন্ত্রণ জানান উদ্যোক্তারা। একই সঙ্গে কলকাতা আর জেলা, দু’টো সামাল দেওয়া তো সম্ভব নয়, তাই কয়েক জায়গা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি।’’
তবে উদ্বোধক হিসেবে ওই সব পুজো উদ্যোক্তাদের ছাপানো কার্ডে এখনও অধীরের নাম।
তবে, এ নিয়ে চাপা শাসানিও শুনতে স্থানীয় ওই উদ্যোক্তাদের। এক পুজো কমিটির কর্তা বলেন, ‘‘গত বিশ বছর ধরে দাদাই (অধীর চৌধুরী) আমাদের পুজোর উদ্বোধন করেন। এ বার নাম বদলানোর দাবি ছিল। মানিনি বলে ফোনে তৃণমূলের হুমকিও শুনতে হয়েছে।’’ বহরমপুরের কাদাই, কাশিমবাজার, স্বর্ণময়ী, গোরাবাজার, লালদিঘি, সৈয়দাবাদ ছাড়াও শহর লাগোয়া হরিদাসমাটি, কৃষ্ণমাটি, বানজেটিয়া, বৈরগাছি এলাকার ছোট-বড় প্রায় ১৪টি পুজোর উদ্বোধন করবেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। কাদাইয়ের কমেট ক্লাব সম্পাদক উজ্জ্বল সরকার বলেন, ‘‘গত ৬ বছর ধরে এক টানা আমাদের পুজোর উদ্বোধন করছেন দাদা। মহাপঞ্চমীতে দাদার হাত দিয়ে পুজোর উদ্বোধনে কমিটির সদস্যদের প্রত্যেকের তাতে সায় রয়েছে।’’
তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন ২০০৪ সাল থেকে টানা বহরমপুর শ্রীসংঘ সর্বজনীন কমিটির পুজো উদ্বোধন করা সত্ত্বেও এ বছর অধীর চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অধীরবাবু বদলে পুজোর উদ্বোধক হিসেবে এ বছর জেলা প্রশাসনের কোনও কর্তার নাম ভাবা হয়েছে। ওই কমিটির পক্ষে গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুজো আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে জুনিয়র সদস্যরা। তারাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলাপ্রশাসনিক কর্তাকে নিয়ে আসার ব্যাপারে।’’ তবে ওই কমিটির থিম ‘বিশ্ব বাংলা’। সরকারি ওই থিমকে প্রাধান্য দিয়ে যারা প্রায় স্পষ্ট করে দিয়েছে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান।