টাকা আছে তো লিঙ্ক নেই, লিঙ্ক আছে তো টাকা নেই। যা-ও বা কিছু টাকা এসেছে, তা পেতে গিয়ে গ্রাহকদের প্রাণ ওষ্ঠাগত।
নতুন সমস্যা, ডাকঘরে পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট জমার উপরে বিধিনিষেধ। নতুন নির্দেশ অনুযায়ী, এক মাত্র সেভিংস অ্যাকাউন্টে পুরনো ওই দুই ধরনের নোট জমা করা যাবে। রেকারিং, ফিক্সড ডিপোজিট বা অন্য কোনও অ্যাকাউন্টে পুরনো নোট জমা করা যাবে না। বেশ কিছু ডাকঘর সেভিংসে টাকা নিতেও অস্বীকার করেছে বলে অভিযোগ।
এক কথায়, বৃহস্পতিবার এই ছিল ডাকঘর নিয়ে ভোগান্তির চিত্র।
মুর্শিদাবাদের কোনও ডাকঘরে এ দিন বেলা সাড়ে ১১টার পরে টাকা লেনদেন করা যায়নি। জেলার হেড পোস্টমাস্টার বিবেকান্দ মণ্ডল বলেন, ‘‘টাকা থাকা সত্ত্বেও লিঙ্ক না থাকায় কাউকেই টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। না হলে এক-এক জনকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া সম্ভব যেত। তাও সকাল ১০টা থেকে ১১টা অবধি জন পিছু দু’হাজার টাকা বাতিল নোট বদল করে দেওয়া হয়েছে।’’
কৃষ্ণনগর মুখ্য ডাকঘরে গত দু’দিন ধরেই টাকা বদলে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে অনেক গ্রাহকই টাকা জমা দিতে এসে ফিরে গিয়েছেন। কৃষ্ণনগর মুখ্য ডাকঘরের আধিকারিক প্রণতকুমার বাগ বলেন, “এমনিই আমাদের টাকা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তার পরেও শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের রোগীদের টাকা ভাঙিয়ে দেওয়ার জন্য শিবির করেছি আমরা। সেই কারণে ডাকঘর থেকে টাকা দিতে পারিনি।” সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালে টাকা ভাঙাতে গেলেন কেন? কর্তার দাবি, ‘‘ওটা বেশি জরুরি ছিল।’’
রেকারিং অ্যাকাউন্টে পুরনো নোট না নেওয়ায় চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন হোগলবেড়িয়ার রবি শর্মা। তিনি বলেন, “রেকারিং অ্যাকাউন্টে মাসে পাঁচশো টাকা জমা দিই। এ বার নোট না নেওয়ায় আমার মতো অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন।” গ্রামগঞ্জের গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে আনা এজেন্টরা পড়ে গিয়েছেন সমস্যায়। কৃষ্ণনগরের উকিলপাড়ার বাসিন্দা সিদ্ধার্থ মন্ডল বলেন, “বহু এজেন্টই গ্রাহকদের থেকে পুরনো নোট নিয়েছেন। জমা দিতে না পারায় সকলেই দিশেহারা।” করিমপুর উপ-ডাকঘরের আধিকারিক সুখেন্দুবিকাশ নাথ বলেন, “সেভিংস অ্যাকাউন্টে পুরনো নোট জমা নেওয়া হচ্ছে। প্রতি দিন প্রায় দেড়শো গ্রাহক টাকা জমা দিচ্ছেন। এ দিন পর্যন্ত প্রায় চার কোটি টাকার পুরনো নোট জমা পড়েছে।”
লিঙ্ক না থাকায় কল্যাণীর মুখ্য ডাকঘরে সারা দিন কোনও কাজই হয়নি। দূর-দূরান্ত থেকে আসা বহু মানুষকে ফিরে যেতে হয়েছে। নদিয়া উত্তর ডিভিশনের সুপার পুলক দাস বলেন, “আসলে আমরা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম টাকা পাচ্ছি। সেটা প্রয়োজনের ১৫ ভাগের এক ভাগ।”
মুর্শিদাবাদ উপ-ডাকঘরে এ দিন নোট বদলের কোনও কাজ হয়নি। সাব পোস্ট মাস্টার কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘লিঙ্ক না থাকার কারণেই এই বিপত্তি।’’ লালগোলায় কিছু টাকা বদলানো হয়েছিল। কিন্তু টাকা কম থাকায় সাড়ে ১১টাতেই লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। ওই ডাকঘরের অধীনে ভগবানগোলা ও রাজারামপুর পোস্ট অফিস ছাড়াও ১৩টি শাখা পোস্ট অফিস আছে। পোস্টমাস্টার অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ দিন সওয়া ৩ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে ভগবানগোলাকে সওয়া ১ লক্ষ, রাজারামপুরকে ৫০ হাজার এবং ৫টি শাখাকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট টাকা দেওয়া হয়েছে লালগোলা সাব পোস্ট অফিস থেকে।’’ লালগোলার ১৩টি শাখা পোস্ট অফিসের মধ্যে ৮টি শাখা এ দিন কোনও টাকা পায়নি।
লিঙ্ক না থাকায় ফিরতে হয়েছে রানাঘাটের বহু গ্রাহককেও। স্থানীয় বাসিন্দা সোমনাথ বিশ্বাস বলেন, “বেশ কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে এসেছি।” রানাঘাট মুখ্য ডাকঘরের আধিকারিক অপূর্ব চক্রবর্তী অবশ্য দাবি বলেন, “এই ডাকঘর ছাড়াও ৩৫টি উপ-ডাকঘরে কাজ হয়েছে। তবে, লিঙ্ক না থাকার জন্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল।”
সাগরদিঘিতে অবশ্য কিছু টাকা দেওয়া গিয়েছে। শাখা ডাকঘরের ইডি পোস্টমাস্টার সফিউল হক বলেন, “সোমবার থেকেই ৫/৬ হাজার করে দেওয়া হচ্ছে।” মুর্শিদাবাদের পোস্টাল সুপার জয়ন্ত ভট্টাচার্য জানান, জঙ্গিপুরে ব্যাঙ্ক টাকা দিতে না পারায় ফরাক্কা ব্যারাজের ব্যাঙ্ক থেকে বিশেষ ব্যবস্থা করে অরঙ্গাবাদ ও ধুলিয়ানের ডাকঘরগুলিতে টাকা পাঠানো হচ্ছে। লালবাগের ব্যাঙ্ক থেকে লালগোলা ও জিয়াগঞ্জের ডাকঘরগুলিতে টাকা যাচ্ছে। এমনিতে জঙ্গিপুরের ব্যাঙ্ক সেগুলিতে টাকা পাঠায়।
সেভিংস অ্যাকাউন্টেও পুরোনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট জমা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশেষ করে রঘুনাথগঞ্জ মুখ্য ডাকঘরগুলির অধীনে থাকা শাখা ডাকঘরগুলিতে। গ্রাহকদের অভিযোগ, গত কয়েক দিন ধরেই রঘুনাথগঞ্জের অধীন সমস্ত ডাকঘরে পুরনো টাকা জমা নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় এক পোস্টমাস্টারের দাবি, রঘুনাথগঞ্জ ডাকঘরে পুরনো নোট রাখার আর জায়গা নেই। ব্যাঙ্কও পুরোনো বাতিল টাকা জমা নিতে চাইছে না। সেই কারণেই তাঁরা নিচ্ছেন না। পোস্টাল সুপার অবশ্য বলেন, “সেভিংস অ্যাকাউন্টে বাতিল নোট জমা নিতে হবে সমস্ত ডাকঘরকেই। গ্রাহকদের হয়রানির অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”