‘প্রশ্ন করলে ঘর হবে না’, তোলার গেরোয় কাউন্সিলর

তবে, ওই দুই কাউন্সিলরই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে পুর প্রধান সুবল সাহার জবাব অবশ্য বেশ নিরুত্তাপ— ‘‘এমন ঘটেছে তো জানতাম না, দেখি খোঁজ নেব।’’

Advertisement

বিমান হাজরা

ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৯ ০০:১৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে উপভোক্তাদের কাছে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে নতুন নয়। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন পুর এলাকায় সে অভিযোগ কখনও সামনে এসেছে, কখনও ধামাচাপা পড়েছে দলীয় নেতা-কর্মীদের ধমকে। দলনেত্রীর হুঁশিয়ারির পরে সেই সব অবদমিত ক্ষোভ ফের সাহস করে সরব হচ্ছে।

Advertisement

ধুলিয়ান সেই তালিকায় রয়েছে প্রথম দিকে। ওই পুর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এমদাদুল মহলদার বলছেন, ‘‘এত দিন ভয়ে চুপ করে ছিলাম, মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ভরসা পেয়ে এ বার পুর প্রধানের কাছে নালিশ জানিয়েছি।’’ তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় তাঁর প্রথম কিস্তির টাকা ব্যাঙ্কে এলেও চেক বইয়ে সই করিয়ে সে টাকা তুলে নিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সফর আলি। একই অভিযোগ করেছেন ওই পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের আজাদ শেখ। তাঁর অভিযোগ, কিস্তির টাকা কোনও দিনই হাতে আসেনি তাঁর। সে টাকা নিয়মিত তুলে নেন স্থানীয় কাউন্সিলর। প্রশ্ন করলে এত দিন উড়ে আসত হুমকি, ‘প্রশ্ন করলে বাড়ি হবে না!’ এ বার পুরপ্রধানের দরজায় কড়া নাড়ছেন তিনিও।

তবে, ওই দুই কাউন্সিলরই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে পুর প্রধান সুবল সাহার জবাব অবশ্য বেশ নিরুত্তাপ— ‘‘এমন ঘটেছে তো জানতাম না, দেখি খোঁজ নেব।’’

Advertisement

ধুলিয়ান পুরসভায় প্রথম যে অভিযোগটি জমা পড়েছে সেটি এমদাদুল মহলদারের। তার অভিযোগ, গত বছর ৩১ ডিসেম্বর তার নামে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে ৭১,৪২৮ টাকা। কিন্তু তাঁকে দেওয়া হয় ৫৬ হাজার টাকা। ১৫ জানুয়ারি (২০১৯) তারিখে তাঁর মোবাইলে মেসেজ আসে— ৮০ হাজার টাকা ফের জমা পড়েছে অ্যাকাউন্টে। কিন্তু এ পর্যন্ত সে টাকা দেওয়া হয়নি তাঁকে। কারণ ব্যাঙ্কের পাশ বই ও তিনটি চেকে আগাম সই করিয়ে রেখেছেন স্থানীয় পুর প্রতিনিধি।

এমদাদুল বলেন, “ ধুলিয়ান শহরে একাধিক সরকারি ব্যাঙ্ক থাকা সত্বেও কাউন্সিলার আমাকে আমার অ্যাকাউন্ট খুলিয়েছেন প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অরঙ্গাবাদের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে। আমার পুরোনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরি শুরু করেও মাঝপথে আটকে কাজ।”

১৫ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা আজাদ শেখ বলছেন, “অ্যাকাউন্ট খোলার সময় তিনটি চেকে সই করিয়ে নিয়েছেন কাউন্সিলার। এ পর্যন্ত এক টাকাও আমাকে দেওয়া হয় নি। বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছেন তার ইচ্ছে মত কাউন্সিলার নিজেই। নির্মাণ সামগ্রী বালি, সিমেন্ট, ইট ও মিস্ত্রি সবই তাঁর।’’

ওই ওয়ার্ডেরই আলিম শেখও অ্যাকাউন্টে টাকা এলেও হাতে পাননি।” লক্ষ্মীনগরের মইদুল ইসলামের প্রাপ্য ৭১ হাজার টাকা। পেয়েছেন ৫৬ হাজার। বাকিটা কাউন্সিলারের ‘কাটমানি’। মানারুল শেখও অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। কিন্তু এখনও পাননি কানাকড়ি।

কংগ্রেসের শহর কমিটির সভাপতি কাশিনাথ রায় বলছেন, “ধুলিয়ান জুড়েই এই কাটমানির খেলা চালাচ্ছে তৃণমূল।’’অভিযুক্ত সফর আলি অবশ্য বলছেন, ‘‘৫৬ হাজার টাকা ওই ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা অ্যাকাউন্টে আছে নিশ্চয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন