ফেরাল হাসপাতাল, প্রসব রাতেই

ডাক্তার বললেন, ‘এটা হোটেল নয় সরকারি হাসপাতাল, চাইলেই ভর্তি হওয়া যায় না’!

পরীক্ষা শেষে গম্ভীর মুখে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, ‘‘এটা হোটেল নয়, সরকারি হাসপাতাল। চাইলেই ভর্তি হওয়া য়ায় না।’’ সতর্ক করে দিয়েছিলেন, মাস খানেকের আগে যেন হাসপাতালে না আসেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ০২:২৫
Share:

নবজাতক: সাগরদিঘির চামুণ্ডায়। নিজস্ব চিত্র

প্রসূতি বিভাগে এসে যন্ত্রণায় ঠোঁট কামড়ে বসে ছিলেন মহিলা বাড়ির লোক বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন— ‘ভর্তি করে নেবেন ডাক্তারবাবু!’

Advertisement

পরীক্ষা শেষে গম্ভীর মুখে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, ‘‘এটা হোটেল নয়, সরকারি হাসপাতাল। চাইলেই ভর্তি হওয়া যায় না।’’ সতর্ক করে দিয়েছিলেন, মাস খানেকের আগে যেন হাসপাতালে না আসেন।

নিশ্চয়যানে চাপিয়েই রেজিনা বিবিকে সাগরদিঘি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে চামুন্ডা গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ির লোক। আর, সে রাতেই প্রসব হল তাঁর। মরিয়া চেষ্টায় গ্রামীণ ধাইমা-ই তাঁকে ফিরিয়ে আনেন মৃত্যুর মুখ থেকে। শুক্রবার সকালেই অবশ্য রেজিনা তাঁর কন্যা সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। তবে, শুনতে হয় পাল্টা গালমন্দ। রেজিনার স্বামী আব্দুল রহিম বলছেন, ‘‘বাড়িতে সন্তান প্রসবের খেসারত হিসেবে আমাদের শিশুর জন্ম-শংসাপত্রও দেওয়া হয়নি। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পাবেন না প্রসুতির প্রাপ্য জননী সুরক্ষার এক হাজার টাকাও। জুটল শুধু গালাগাল।’’ ওই আশা কর্মীকেও বাড়িতে প্রসবে সাহায্য করানোয় প্রাপ্য অনুদানও দেওয়া হয়নি।

Advertisement

শনিবারই সাগরদিঘি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আব্দুল।

রেজিনা একা নন, শুক্রবার ওই হাসপাতাল থেকে একই ভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হয় সাগরদিঘির উলাডাঙার প্রসূতি সালেমা বিবিকেও। বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ প্রসুতিকে নিয়ে ওই হাসপাতালে যান তাঁর শাশুড়ি কামরুন্নেসা বিবি। তিনি বলেন, ‘‘বৌমা’কে ‘এক মাস দেরি আছে’ বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ির খোঁজ করতে গিয়েছিলেন সালেমার বাড়ির লোক। ফিরে এসে দেখেন হাসপাতালের বারান্দায় বসে ছটফট করছেন তরুণী। শুরু হয়েছে রক্তক্ষরণ। প্রসূতি বিভাগে প্রায় জোর করেই ভর্তি করানো হয় তাঁকে। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই প্রসব হয় তাঁর।

রেজিনার স্বামী আব্দুর রহিম বলছেন, ‘‘রাতে বাড়িতে আনার পরেই ফের প্রসব বেদনা শুরু হয় রেজিনার। সেই সময়ে আশাকর্মী সীমা মন্ডল ও দাই টুকটুকি দাসকে না পেলে বৌ’টা মরেই যেত!’’

তিনি জানান, কোনো সমস্যা হতে পারে আশঙ্কায় ফের শুক্রবার সাত সকালেই ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে শুনতে হয়েছিল—কেন বাড়িতে প্রসব হল? তা নিয়ে গালমন্দও করা হয় তাঁদের।

উলাডাঙার প্রসুতি সালেমা বিবির শাশুড়ি কামুরুন্নেশার অভিজ্ঞতা— ‘‘বৌমার রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আমি তো বুঝি, বললাম ওকে ভর্তি করে নাও বাবা। নার্সরা বলল, ‘ডাক্তার হয়ে গেছ দেখছি!’’ সাগরদিঘিতে কোনও ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। গ্রামীণ হাসপাতালটিও তুলে দেওয়া হয়েছে। ব্লকে আরও যে তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছিল মনিগ্রাম, গৌরীপুর ও সূর্যপুরে, বন্ধ সেগুলিও। তবে, সেই গ্রামীণ হাসপাতাল চত্বরেই চালু হয়েছে সাগরদিঘি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। বন্ধ হওয়া গ্রামীণ হাসপাতালের সব কর্মী ও চিকিৎসক যোগ দিয়েছেন সেখানেই। স্বভাবতই প্রসুতিদের এখন একমাত্র ভরসা ব্লকের ওই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। অথচ বার বার সেখান থেকে প্রসুতিদের ফেরানো হচ্ছে।

সাগরদিঘির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এ এম সামিম বলেন, “প্রসুতিদের ফেরানো, দুর্ব্যবহারের অভিযোগ অসত্য নয়। আমি এ ক্ষেত্রেও লিখিত অভিযোগ পেয়ে প্রসূতির সঙ্গে কথা বলেছি। জেলার এক ডেপুটি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকও সেখানে ছিলেন। সমস্ত ঘটনা জানানো হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে।’’

শুধু আকাশ থেকে পড়ছেন, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সহকারী সুপার সব্যসাচী দাস “এমন ঘটনার কথা জানি না তো!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন