গুলি-বারুদের নির্বাচন ঢের দেখেছে ডোমকল। ভোটের আগে, স্বজন হারানোর শঙ্কায় মায়ের ফুঁপিয়ে কান্না, তা-ও অচেনা নয়।
জুগিন্দার বশির আলি বলছেন, ‘‘দলের জন্য প্রাণপাত করতে ডোমকল পিছপা হয় না। এক ইঞ্চি জমি ছাড়ার প্রশ্ন নেই! সেই বিশ্বাসেই তো প্রতি বার ভোটে অতগুলো করে লোক মরে!’’ ডোমকল অবাক হয়ে যাচ্ছে সেই ‘ভাঙা বিশ্বাস’ দেখে!
২০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম সমর্থক অবাক হয়ে বলছেন, ‘‘আগের রাতেও অত আলোচনা হল, আর পরের দিন গিয়ে সবুজ আবীর মেকে নিল গো!’’ ৯ নম্বরের কংগ্রেস প্রার্থী আসাদুলের ডিগবাজি দেখে সেখানকার দলীয় কর্মীরাও সমান বিস্মিত, ‘‘শুনেই বুকটা ধক করে উঠেছিল, আসাদুল তৃণমূলে ভিড়ে গেল, বিশ্বাসটাই ভেঙে গেল গো!’’
সদ্য সেজে ওঠা পুরসভার আনাচ কানাচে এখন এমনই ভাঙা-বিশ্বাসের গুঞ্জন। প্রথম পুরসভার নতুন এই ভোটে এ বার অনেক কিছুই দেখল ডোমকল। রাতারাতি দলবদল, তার পরেও কি না অনেকে বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াচ্ছে, এলাকার অধিকাংশ মানুষ চেয়েছে বলেই তৃণমূলে ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের এক ভোটারের প্রশ্ন, ‘‘তাই যদি হয়, আগের সকালেই সবাই মিলে তাঁকে জোট প্রতীকে ভোটটা দিলেন কেন!’’
যা শুনে সদ্য ডিগবাজি খাওয়া রফিকুল কবুল করছেন, ‘‘আসলে কি জানেন দাদা, যা ভোট দেখলাম তাতে বিরোধিতা করার সাহসটাই হারিয়ে ফেলেছি।’’ তাঁর দাবি, তিনি একা নন, তাঁর অনুগামীরাও তাঁকে ক্রমাগত পরামর্শ দিয়ে চলেছেন, ‘‘বেঁচে থাকতে গেলে শাসকের পাশে থেকেই বাঁচতে হবে।’’
আক্তারুল ইসলাম তেমনই এক অনুগামী, বলছেন, ‘‘দিনভর যে ভাবে ভোট চলেছে তা গোটা ডোমকল দেখেছে। ফলে আমরা সকলে মিলেই প্রর্থীকে বলেছিলাম আর নয়, এবার বাঁচতে গেলে ওদের পাশেই থাকতে হবে। তাতে উন্নয়নটাও যদি হয়।’’
তা বলে কি আস্ত ওয়ার্ডটাই সুর বদলে ফেলল? কপালের ঘামে খেটো গামছা চালিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ইলিয়াস মোল্লা বলছেন, ‘‘কোনও ভয় নাই, ডোমকল কাওরে ডরায় না। নাম করে লিখুন, এ সব মিথ্যাচার। কাঁচা টাকা হাতে পেয়ে ওদেরও মাথা
ঘুরে গিয়েছে।’’
তবে, লড়াইয়ের ডোমকল এ বার যেন একটু শান্তি খুঁজছে। আমিনাবাদের মসলেম আলির ভাঙা গলায় যেন সেই সুর, ‘‘খুব হল বাপু, সারা জীবন ‘লড়াই লড়াই লড়াই বলে কাটিয়ে দিলাম। এখন মনে হচ্ছে একটু শান্তি দরকার।’’ আর তা চাইলে বিরোধিতা করলে যে চলবে না তা ঠারেঠোরে বুঝে গিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব মসলেম।
তবে, খোলা দাওয়ায় বসে মনে তাঁর পড়ে যাচ্ছে, এক বছর আগে হারানো স্বামী তহিদুল ইসলামের কথা। মুর্শিদা বলছেন, ‘‘ডোমকলে বদল কোথায়, তার চরিত্র হারায়নি ভাইজান। আসলে ওরা সব পাকা বেইমান, বছরও ঘুরল না দলের লোকটাকেই ভুলে গেল!’’