‘ধর্ষিতা’, গ্রাম জুড়ে গঞ্জনায় পুড়ে মৃত তরুণী

রাত এগারোটা বেজে যাওয়ার পরেও বাড়ি না ফেরায় শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। এই সময়ে অসুস্থ অবস্থায় ফিরে এসেছিলেন ওই মহিলা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নওদা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০১:৫২
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাড়ির কাছেই বসেছিল ধর্মীয় জালসার আসর। দেড় বছরের ছেলেকে নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন মা।

Advertisement

কিন্তু ছেলের কি জালসায় মন ভরে, কাঁদতে শুরু করলে তাকে নিয়ে বাড়ির পথ ধরেছিলেন তিনি।

মাঝপথে জনা কয়েক মদ্যপ তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে তাঁকে। কোনও মতে টলতে টলতে ফিরে আসেন বাড়ি। কিন্তু তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কিংবা দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করা দূরে থাক, বাড়ি ফিরে তাঁকে শুনতে হয়েছিল গঞ্জনা।

Advertisement

শুধু শ্বশুরবাড়ির লোকজন নন, নানান বিরূপ কথা উড়ে আসতে থাকে বাপের বাড়ি থেকেও। অপমান আর সহ্য করতে পারেননি তিনি। নিজের ঘরে কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানিয়েছে এটি আত্মহত্যার ঘটনা। তবে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

নওদার ডাঙাপাড়ার এই তরুণীর বিয়ে হয়েছিল বছর কয়েক আগে। স্বামী মজিরুদ্দিন শেখ, ইট ভাটার শ্রমিক। শারীরিকভাবে অসুস্থ। শুক্রবার জালসা শুনে শ্বশুরবাড়ির গ্রামেই ফিরছিল সে। পথেইঘটে গিয়েছিল চরম বিপত্তি।

রাত এগারোটা বেজে যাওয়ার পরেও বাড়ি না ফেরায় শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। এই সময়ে অসুস্থ অবস্থায় ফিরে এসেছিলেন ওই মহিলা।

তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দূরের কথা, ফেরার পরেই বাড়ির লোক প্রশ্ন তোলে— কোথায় ছিলে এতক্ষণ?

শুরু হয়, নানা ভাবে গঞ্জনা। সে গঞ্জনায় অতিষ্ঠ হয়ে পরের দিনই বাপের বাড়ি চলে যান তিনি। কিন্তু সেখানেও শান্তি নেই, গ্রামের মাতব্বরেরা সেখানেও চড়াও হয়ে গঞ্জনা শুরু করে। মারধরও করা হয় তাঁকে।

এর পরেই শনিবার বাপের বাড়িতে একটি ঘরে ঢুকে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় সে বলে বাপের বাড়ির অভিযোগ।

দগ্ধ অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করানো হয় গ্রামীণ হাসপাতালে। পরে অবস্থান অবনতি হওয়ায় স্থানান্তরিত করা হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বুধবার রাতে সেখানেই মারা যান তিনি।

তবে ওই তরুণীর মৃত্যুকালীন জবানবন্দি শুনে পুলিশ জলি শেখ নামে এক জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছে। তবে অভিযুক্তের খোঁজ মেলেনি।

তবে ওই ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই রাতের ঘটনার পরেই ওই তরুণী মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। সেই সময়ে প্রয়োজন ছিল পরিবারের লোকজনের তাঁর পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু পরিবারের লোকজনকে তিনি পাশে পাননি। বাধ্য হন চরম সিদ্ধান্ত নিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন