বাড়ি বাড়ি গিয়ে চলছে জীবাণুমুক্ত করার কাজ। নিজস্ব চিত্র
মাস্ক, টুপি পরা ছেলেটিকে পিঠে ড্রাম নিয়ে লোকের বাড়ি বাড়ি স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করতে দেখে স্বরূপগঞ্জ পশ্চিম পাড়ার লোকেরা প্রথমে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী মনে করেছিলেন। তবে ভুল ভাঙে যখন দেখেন বাড়ির বাইরে রাস্তাতেও একাধিক ছেলে মুখে মাস্ক, মাথায় টুপি, হাতে গ্লাভস পরে স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করছেন। ওঁদের একজন নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমরা স্বাস্থ্যকর্মী নই, রাজনৈতিক কর্মী। এই করোনা আবহে মিটিং, মিছিল প্রতিবাদের পাশাপাশি এই কাজটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। তাই এলাকা স্যানিটাইজ় করার কাজে নেমে পড়েছি।’’ শুনে খুশিই হয়েছিলেন এলাকার মানুষ।
এ ভাবেই গত শুক্রবার থেকে লাগাতার স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েতের বুথ ধরে ধরে এলাকা স্যানিটাইজ় করার কাজ শুরু করেছেন বামেদের যুব সংগঠনের কর্মীরা। সঙ্গে থাকছেন স্থানীয় সিপিএম-সহ দলের অন্যান্য শাখা সংগঠনের সদস্যরাও। হঠাৎ এমন উদ্যোগ কেন? জবাবে ডিওয়াইএফ-এর স্বরূপগঞ্জের শাখা সম্পাদক কল্লোল দাস বলেন, “যে কাজ সরকারের করার কথা ছিল, তারা করছে না, তাই আমরা করছি। এই এলাকায় স্থানীয় স্কুলে কোয়রান্টিন সেন্টার চলছে। তাতে এখনও বহিরাগতরা আছেন। এখন যখন মানুষকে নিয়মিত পথে বের হতে হচ্ছে তাই আমাদের মনে হয়েছে ওই সেন্টারের চারপাশ ঘিরে নিয়মিত স্যানিটাইজ় করা দরকার।’’
এই কাজে প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা করে বরাদ্দ করেছে ডিওয়াইএফ-এর স্বরূপগঞ্জ শাখা। সঙ্গে থাকছেন স্থানীয় সিপিএমের যুবরাও। এই প্রসঙ্গে সিপিএমের স্বরূপগঞ্জের শাখা সম্পাদক সুদীপ দেবনাথ বলেন, “প্রতিবাদ বিক্ষোভের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি যেমন চলছে, চলবে। কিন্তু এই মুহূর্তে আরও জরুরি মানুষকে করোনা আবহে যতটা সম্ভব সহায়তা দেওয়া। প্রতি দিন সংক্রমণ বাড়ছে আমাদের জেলা জুড়ে। অথচ মানুষের জন্য কিছুই করা হচ্ছে না।”
ডিওয়াইএফ-এর স্বরূপগঞ্জ শাখার সভাপতি চিরঞ্জিৎ দাস জানান, তাঁদের পরিকল্পনা গোটা স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েতের সব বুথের সব বাড়ি এই ভাবে স্যানিটাইজ় করা। চিরঞ্জিৎ নিজে একজন নির্মাণ শ্রমিক। তিনি বলেন, “আমরা আনলক পর্বে রোজগারের জন্য বাড়ির বাইরে বেরোতে বাধ্য হচ্ছি। ফলে অঞ্চলটাকে স্যানিটাইজ় করাটা ভীষণ জরুরি মনে হয়েছে। হাত পরিষ্কার, মুখে মাস্কের সঙ্গে এলাকাও নিয়মিত স্যানিটাইজ় করা দরকার।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার তাঁরা গিয়েছিলেন ১৭৯ নম্বর বুথের ডাকঘর পাড়া। রবিবার বিকেলে স্বরূপগঞ্জের পুরনো ছোটরেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ি, রাস্তার কল, স্যানিটাইজ় করেন ওঁরা। ডিওয়াইএফ-এর তরফে জানানো হয়েছে তাঁরা পালস অক্সিমিটার এবং অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থাও রাখছেন। যাতে কারও কোনও সমস্যা হলে প্রাথমিক সহায়তাটুকু এখান থেকেই তাঁরা দিতে পারেন।