Islampur

হাত থেকে পাটাতনে ছিটকে পড়ল মাছ

অতল পদ্মা রুপোলি রং নিয়ে দিনভর পড়ে আছে, রাতে তার অন্য চেহারা। অন্ধকার নিয়ে তার রাত যাপন, সেই আঁধার পদ্মার মাঝিদের অন্যরকম অভিজ্ঞতা শুনল আনন্দবাজার

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

ইসলামপুর শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৫৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

সন্ধ্যাবেলা পড়ার পাঠ চুকিয়েই জনা কয়েক বন্ধু মিলে বেরিয়ে পড়া ছিল নিত্য রেওয়াজ। এ পাড়া ও পাড়া ঘুরে, কখনও গাছের ডাব, কখনও পেয়ারা— ভৈরবের পাড়ে দাপিয়ে বেড়ানো সেই সদ্য তরুণের দল ভেসেছিলেন পদ্মার শাখা নদ ভৈরবের বুকে।

Advertisement

ভৈরবের জলে নৌকায় বসে মাছ ভেজে খাওয়ার সেই দিনটা আজও ভুলতে পারেনি ইসলামপুরের ধীমান দাস। ৬১ বছরে পা দিয়ে ভৈরবের পাড়ে বসেই সেদিনের গল্প শোনাচ্ছিলেন এক সময়ের জেলার ডাকাবুকো গোলরক্ষক।

তাঁর কথায়, ‘‘বয়স তখন মেরেকেটে আঠারো। ফুটবল খেলে এলাকায় বেশ নামডাক হয়েছে আমার। লেখাপড়া খেলাধুলোর পাশাপাশি ডানপিটেপনাও কম ছিল না। মাঝেমধ্যেই রাত ন'টার পর পড়াশোনা শেষ করে বন্ধুদের নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম। এ পাড়া সে পাড়া বা ভৈরবের পাড়ে। কারও গাছে ডাব বা নারকেল হয়েছে খবর পেলেই হাজির আমরা পাঁচ থেকে ছ’জন বন্ধু। পেয়ারা আম বা লিচু চুরি, নুন মাখিয়ে খাওয়ার আনন্দটাই ছিল অন্য রকমের। আবার মাঝে মাঝে ভৈরবের পাড় থেকে মাছ চুরি করে পিকনিক করার ঝোঁকটাও কম ছিল না।’’ এক রাতে বাই উঠল সকলের, নদী থেকে টাটকা খয়রা মাছ ধরে খিচুড়ির সঙ্গে খাওয়া হবে, আর সেটা খাওয়া হবে চকজমার শ্রীদাম হালদারের নৌকায় ভৈরবের উপর। যেমন কথা তেমন কাজ, বাড়ি থেকে চাল ডাল আর তেল নিয়ে রওনা হলেন সকলে।

Advertisement

মাঘের শীত, তাতেই প্রায় কোমর জল ডিঙিয়ে ছয় বন্ধু উঠল নৌকায়। শ্রীদাম কাকার এক ঘুম হয়ে গিয়েছে। হুড়মুড়িয়ে উঠে জানতে চাইলেন এই রাতে আগমনের কারণ। সব শুনে রাতের বেলা মাছ ধরে খাওয়া নিয়ে চরম আপত্তি জানালেন। নানা রকম ভাবেই তিনি বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন, রাতে মাছ ধরতে নেই, এমনকি শেষ পর্যন্ত মেছো ভূতের গল্প শুনিয়ে ভয় ধরানোর চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু উঠতি বয়সে কানেই তোলেনি কেউ।

ঝাঁপিয়ে উঠে খরার জাল তুলে নিজেরাই ধরে নিয়েছিলাম মাছ। উপায় না দেখে শ্রীদাম চুপচাপ নৌকার একপাশে ঠাঁই নিয়েছে। নিজেদের নিয়ে যাওয়ার চাল ডাল তেল চেপে গেল শ্রীদামের হাঁড়িতে। স্টোভ জ্বালিয়ে শুরু হল খিচুড়ি রান্না, টাটকা মাছ ভাজা আর খিচুড়ি খাওয়ার আনন্দে মাঘের ঠাণ্ডা তখন উধাও। লন্ঠনটা নৌকার ছইয়ে ঝুলিয়ে সবাই মিলে বসেছে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়ার অপেক্ষায়। বিপত্তি নামল তখনই। গরম খিচুড়ি থেকে ধোঁয়া উঠছে। ভাজা মাছের পাশে আধখানা পেঁয়াজ। নদীর জলে হাত ধুয়েই শুরু হল খাওয়া, কেউ গরম খিচুড়িতে হাত দিয়েছে কেউ আবার টাটকা ভাজা মাছে। এমন সময় একটা ঝিরঝিরে হাওয়ার সঙ্গে হিমালয় থেকে নেমে আসা ঠান্ডা। ধীমান বলছেন, ‘‘বললে বিশ্বাস করবেন না, নিমেষে হিম হয়ে গেল চরাচর। মাছ মুখে তুলতে গিয়ে দেখলাম হাত কাঁপছে থরথর করে। হাত থেকে ভাজা মাছ পড়ে যাচ্ছে নৌকার পাটাতনে, শ্রীদাম কাকার দিকে তাকিয়ে দেখলাম চোখটা বড় হয়ে উঠেছে তাঁর। বিড়ির আগুনটা টানা জ্বলছে। ধোঁয়া ছেড়ে বলে উঠলেন, ‘‘কত করে বললাম শুনলে না তো!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন