জীবনে ব্যাঙ্কে যাননি, অ্যাকাউন্টে দু’লক্ষ! চমকে গেলেন প্রৌঢ়া

জীবনে ব্যাঙ্কের দরজা মাড়াননি কখনও। অথচ তাঁরই আধার কার্ড নথীভুক্ত করিয়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের ফরাক্কা ব্যারাজ শাখায় তার নামে অ্যাকাউন্ট খুলে দিব্যি লেনদেন চলেছে তাতে। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪২
Share:

প্রতীকী ছবি।

জীবনে ব্যাঙ্কের দরজা মাড়াননি কখনও। অথচ তাঁরই আধার কার্ড নথীভুক্ত করিয়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের ফরাক্কা ব্যারাজ শাখায় তার নামে অ্যাকাউন্ট খুলে দিব্যি লেনদেন চলেছে তাতে।

Advertisement

শুক্রবার ওই ব্যাঙ্কে বিড়ি শ্রমিক হিসেবে নিজের নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়েই বছর পঞ্চান্নের মানোয়ারা বিবির মাথায় হাত। ব্যাঙ্ক কর্তারা তার আধার কার্ড হাতে পেয়ে জানিয়ে দিয়েছেন মহিলার নামে ওই ব্যাঙ্কেরই পাশের শাখায় রয়েছে একটি অ্যাকাউন্ট। শুধু তাই নয় , ওই অ্যাকাউন্টে এই মুহূর্তে জমাও পড়ে রয়েছে প্রায় দু’লক্ষ টাকা।

স্ত্রী মানোয়ারার সঙ্গে থাকা বয়োবৃদ্ধ স্বামী জালাউদ্দিনের তখন ব্যাঙ্ক কর্তার কথা শুনে ভিমরি খাওয়ার জোগাড়, “বলেন কি বাবু। কুড়ি হাজার টাকাই এক সঙ্গে কখনও চোখে দেখিনি। বাড়িটার ছাদটাও ঠিকমত দিতে পারিনি এখনও টাকার অভাবে। অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ব্যাঙ্কেই আসিনি। আর সেখানেই কিনা দু’লক্ষ!’’

Advertisement

মানোয়ারা বলছেন, “কোথাও একটা ভুল হচ্ছে না তো? আর একবার নম্বরটা মিলিয়ে যদি দেখতেন।” ব্যাঙ্কের কর্মী কম্পিউটার সার্ভারে বার ডিজিটের আধার নম্বর দিতেই চোখের সামনে কম্পিউটরে ভেসে উঠল— মানোয়ারা বিবি, স্বামী জালাউদ্দিন শেখ , গ্রাম নিউ ফরাক্কা হাইস্কুল পাড়া। অ্যাকাউন্ট নম্বর............।

ব্যাঙ্ক কর্মীর পরামর্শে, “একটা অ্যাকাউন্ট থাকতে আবার অ্যাকাউন্ট খুলতে যাবেন কেন? যান পাশেই তো ব্যাঙ্ক। গিয়ে দেখুন না তারা কি বলে।” ফরাক্কায় ওই রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের একাধিক শাখা কাছাকাছি।

অগত্যা স্বামীকে নিয়ে এ বার মানোয়ারা নিউ ফরাক্কা শাখা থেকে হাজির ওই ব্যাঙ্কের ফরাক্কা ব্যারাজ শাখায়। কিন্তু সেখানেও আধার নম্বর দিতেই সেই একই কথা “ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে তার। মোটা টাকাও রয়েছে সেখানে।”

মানোয়ারা বলছেন , “আমি বার বার ব্যাঙ্কের বাবুদের বোঝাবার চেষ্টা করেছি যে এটা আমার অ্যাকাউন্ট নয়। এত দিন প্রয়োজন পড়েনি তাই অ্যাকাউন্ট খুলিনি। এখন বিড়ি শ্রমিক হিসেবে পিএফ’র সুবিধা নিতেই অ্যাকাউন্ট খুলতে আসা। কিন্তু আমার আধার কার্ড নিয়ে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলায় আশঙ্কা হচ্ছে কোনো জালিয়াতিতে জড়িয়ে বিপদে পড়ব না তো?”

শেষ পর্যন্ত ব্যাঙ্কের কাছে লিখিত অভিযোগ পত্র জমা দেন মানোয়ারা। সিল মেরে ব্যাঙ্কের অফিসাররা লিখেও দেন ব্যাঙ্কে মানোয়ারা অ্যাকাউন্ট বহাল থাকার কথা। শুক্রবার রাতেই ফরাক্কা থানায় যান মানোয়ারা দম্পতি। লিখিত অভিযোগ দেন থানাতেও।

ফরাক্কা থানার উদয়শঙ্কর ঘোষ জানান, অন্যের আধার নম্বর পাওয়া হয়ত সহজ। কিন্তু আধার কার্ডে থাকা ছবি, আঙুলের ছাপ এ সব মিলিয়ে দেখেই তো নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার কথা। তা হলে মানোয়ারার ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলা হল কিভাবে? ব্যাঙ্ককেই তো বলতে হবে এটা কিভাবে হল, কাদের সাহায্যে ঘটল?’’

তিনি বলেন, “ শুক্রবার রাতে মানোয়ারার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ আরও আছে ফরাক্কায়। কেউ আড়ালে থেকে এইসব অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে। ব্যাঙ্কে গিয়ে সমস্ত নথি পরীক্ষা করে জালিয়াতির উতস ধরার চেষ্টা হচ্ছে।”

ওই ব্যাঙ্কের শাখা প্রবন্ধক অনন্ত কুমার ঘোষ অবশ্য বলেন, “কীভাবে এটা ঘটেছে বলতে পারব না। নথিপত্র না দেখে এখনই কিছু বলা যাবে না। তবে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন