হঠাৎ মনে হল, মা বেঁচে আছে তো!

মা’কে নিয়ে এসেছিলাম হাসপাতালে। সঙ্গে দুই মেয়েও ছিল। আমি টিকিট করালাম মায়ের। এক ততলায় ডাক্তারের ঘরের সামনে লম্বা লাইন। বসিয়ে রেখে দুই মেয়ের সর্দি-কাশি দেখাতে উঠে গেলাম দো-তলায়।

Advertisement

শেফালি মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৯ ০০:১৭
Share:

ছবি: গৌতম প্রামাণিক

মা’কে নিয়ে এসেছিলাম হাসপাতালে। সঙ্গে দুই মেয়েও ছিল। আমি টিকিট করালাম মায়ের। এক ততলায় ডাক্তারের ঘরের সামনে লম্বা লাইন। বসিয়ে রেখে দুই মেয়ের সর্দি-কাশি দেখাতে উঠে গেলাম দো-তলায়।

Advertisement

তখন প্রায় সাড়ে ন’টা বাজে। শিশু বর্হিবিভাগের সামনেও লম্বা লাইন। মেয়েটা ঘ্যানঘ্যান শুরু করল। বিরক্ত লাগছে। দুশ্চিন্তাও হচ্ছে। মা একা বসে আছে কিনা। বাবলাম একবার। দেখে আসি। তার পরে ভাবলাম, আমাবর নীচে যাব, যদি আমার নাম ডাকে, তা হলে মেয়েটাকে দেখানো হবে না।

এই সব সাত পাঁচ ভাবছি, হঠাৎ একরটা গোলমাল কানে এল। চেঁচামেচির মধ্যেই শুনলাম, ‘আগুন আগুন’। কয়েক জন আমার সামনে দিয়েই দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকল। এক জন আমার সামনেই হুমড়ি খেয়ে পড়ল। কি করব বুঝতে না পেরে মেয়ের হাত ধরে, অন্যটাতে ট্য়াঁকে করে আমিও সিঁড়ির দিকে এগোলাম। আপন মনেই ডাকলাম, ‘মা’। ও মা সিঁড়ির মুখে গিয়ে দেখলাম, স্রোতের মতো ভিড়। সবাই আগে নামতে চায়। কি হয়েছে পাশের মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি উত্তর দেওয়ার আগেই ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলেন। এ বার আমার সামনেই একে একে আরও তিন চার জন সিঁড়িতে পড়তে থাকলেন।

Advertisement

হঠাৎই একটা বড় ধাক্কা। টাল সামলা না পেরে আমিও গড়িয়ে গেলাম সিঁড়িতে। মেয়েরা কোথায় ছিটকে পড়ল আর মনে নেই। শুধু মেয়ের কান্নাটা কানে এল। জ্ঞান ফিরল যখন আমাকে ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

অণিমা মণ্ডলের মেয়ে, শেফালি মণ্ডল

জ্ঞান ফিরতেই আমি মা আর দুই মেয়ের খোঁজ করতে লাগলাম। তখন এক জন স্বাস্থ্য কর্মী আমাকে জানালেন, সবাই ভাল আছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শরীরে ব্যথা করতে থাকে। মহিলা বিভাগে ভর্তি করানো হল আমাকে। সেখানে জানতে পারি মা-ও ভর্তি রয়েছে অসুস্থ হয়ে। কিন্তু মাকে সেখানে দেখতে পাইনি। পরে জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি হাসপাতালের ট্রলিতে শুয়ে আছি। মেয়ে দু’টো পাশে কাঁদছে। মায়ের কথা মনে পড়ল আবার। হঠাৎ মনে হল এক বার উঠে এক বার ওয়ার্ডটা ঘুরে দেখি। ।

তবু উঠলাম। ঘুরে দেখলাম। না, কোথাও নেই মা। তা হলে? এ বার ভয়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হল। তার পর মেয়েদের হাত ধরে বাইরে এলাম। তখন আর মাথায় কিছু ঢুকছে না। হঠাৎ মনে হল, মা বেঁচে আছে তো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন