ময়দান ভরাতে ‘বুলাও বিদেশি’

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। সদ্য সাঙ্গ হল ইদ-উল-ফিতর, রথযাত্রা। দুর্গা পুজো, ইদুজ্জোহার এখনও ঢের দেরি। তাহলে এই সময়ে কী হবে? সীমান্তের প্রত্যন্ত গাঁ থেকে জেলার সদর শহর সমস্বরে গর্জে উঠল— কেন, ফুটবল! ফুটবলের সেই উৎসবের খোঁজ নিতে মাঠে নামল আনন্দবাজার।

Advertisement

সুজাউদ্দিন ও দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৭ ১৩:০০
Share:

ফাইল চিত্র।

ঠিক যেন যাত্রাপালা কিংবা নাইট উৎসবের প্রচার!

Advertisement

এ পাড়া থেকে ও পাড়া ছুটে বেড়াচ্ছে টোটো, ভ্যান। চোঙা ফুঁকে জানানো হচ্ছে, ‘আনন্দ সংবাদ, আনন্দ সংবাদ। টিভির পর্দার মতো এ বার পাড়ার মাঠেই দাপিয়ে বেড়াবে বিদেশি ফুটবলার। ভিড় এড়াতে অগ্রিম টিকিট কাটুন। মহিলাদের বসিবার ও সাইকেল রাখিবার সুব্যবস্থা আছে।’

সেই সঙ্গে হাওয়ায় উড়ছে ক্যাটক্যাটে গোলাপি রঙের লিফলেট। সময়সূচি ও বিজ্ঞাপনে ভরা লিফলেট কুড়োনোর সে কী কাড়াকাড়ি! তেমাথায়, চায়ের দোকানে, মাচায়, মাঠে শুরু হয় জোর চর্চা।

Advertisement

—২২ জনই বিদেশি নাকি?

—আরে না, না। লোক দেখাতে কয়েক জন।

—তাতেই দেখবে মাঠ কাঁপবে। কী সব দানোর মতো দেখতে। আর গায়ে তেমনই বল!

—বিদেশি আনার খরচাও তো কম নয়।

তা হোক। কিন্তু বিদেশি খেলোয়াড় নামাতে পারলেই ভিড়ে উপচে পড়বে মাঠ। আয়োজকদের কদর বাড়বে। উঠে আসবে টাকাও। অতএব, ‘বুলাও বিদেশি।’

বুলাও তো বটে! কিন্তু আনবে কে?

ডোমকলের এক ক্লাব কর্তা মিজানুল হক বলছেন, ‘‘যে ভাবে সিনেমা কিংবা সিরিয়ালের নায়ক নায়িকাদের আনা হয় গাঁয়ের নাইট কিংবা যাত্রাপালায়, একই কায়দায় কলকাতা থেকে আমরাও নিয়ে আসি নাইজেরিয়া, ঘানা কিংবা উগান্ডার খেলোয়াড়দের।’’

মিজানুল জানান, কলকাতায় ওই বিদেশি খেলোয়াড়দের এজেন্ট থাকে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই সব ঠিক করা হয়। এক এক জন খেলোয়াড় আনতে খরচ ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে যাতায়াত ও খাওয়া খরচ। নদিয়ার এক ক্লাব কর্তা মৃদুল মণ্ডল জানান, খেলা তো এখন উৎসব। ফলে খরচ নিয়ে অত ভাবলে চলে নাকি! দল তৈরি করতে ক্লাবের লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। এখানে জেতাটাই বড় কথা।

বছর তিনেক আগে এক শীতের দুপুরে চমকে উঠছিল নবদ্বীপ। সে দিন এক নতুন ইতিহাস লিখেছিলেন তিন নাইজেরীয়— ড্যানিয়েল বেদানি, অ্যানি লো, লেথানিল। মফস্‌সলের ক্লাবের হয়ে মাঠে নামছে বিদেশি খেলোয়াড়! চমকের জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। নবদ্বীপ পুরসভা পরিচালিত সকার কাপের মরসুমে ভিকি, এডু, রুনি, উবো-র মতো নাম লোকের মুখে মুখে ঘোরে। কয়েক বছর আগেও ছবি এমন ছিল না। তখন ফুটবলটা মূলত খেলত এলাকার ছেলেরাই। তাঁরা মাঠে নামলেই গলা ফাটাত গোটা গ্রাম। অমুক গ্রামের সঙ্গে তমুক গ্রামের খেলা। রীতিমতো যুদ্ধের আবহ। মাঠে জায়গা দেওয়া কঠিন হত। গ্রাম বা পাড়ার জন্য জান লড়িয়ে খেলত খেলোয়াড়েরা।

তারপর মাঠে বিদেশি ও বাইরের খেলোয়াড়েরা নামতে শুরু করায় স্থানীয় খেলোয়াড়েরা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে সাইড লাইনের বাইরে। নবদ্বীপের প্রাক্তন খেলোয়াড় শিবপ্রসাদ ঘোষালের আক্ষেপ, ‘‘ফুটবল যদি উৎসব হয়। এটা তাহলে সেই উৎসবের অন্ধকার দিক। জৌলুস হয়তো বাড়ছে। কিন্তু স্থানীয় ফুটবলের আদৌ কোনও উন্নতি হচ্ছে কি?’’

(চলবে)

সহ প্রতিবেদন: কল্লোল প্রামাণিক

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement