ফাইল চিত্র।
তিনি আপাতত শ্রীঘরে, আর তার পর থেকে কল্যাণীর কেন্দ্রীয় সরকারি খাদি শিল্প কেন্দ্রের চামরার ইউনিটের কাজকর্মও স্তব্ধ।
তিনি মানিক মুখোপাধ্যায়। গয়েশপুর পুরসভার টানা দু’বারের এই বাম কাউন্সিলর মানিক মুখোপাধ্যায় ছিলেন কেন্দ্রটির ইনচার্জ। ভাগাড়ের মাংস কাণ্ডে বজবজ থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করার পরেই সামনে এসে পড়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভিতরে অবৈধ মাংসের কারবারের ঘটনা। এলাকার মানুষই এখন বলছেন, অনেক দিন থেকেই ওই কেন্দ্র হয়েছিল ‘ঘুঘুর আস্তানা’। তাঁরা আঁচ করতে পারতেন, অনেককিছু গোলমাল রয়েছে কেন্দ্রের কাজকর্মে, কিন্তু হাতেনাতে ধরতে পারতেন না। মৃত পশুর মাংস মাঝেমধ্যেই গাড়ি বোঝাই করে বাইরে নিয়ে যাওয়া হত। পচা গন্ধ বার হত। বেশ কয়েক বার এলাকার লোক গাড়ি আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। মানিক ও তাঁর দলবল তাঁদের বোঝাতেন, নৈহাটিতে হাইব্রিড মাগুরের চাষ হয়। সেখানে মাছের খাদ্য হিসেবে ওই মাংস যাচ্ছে!
১৯৫৮ সালে তৈরি এই কেন্দ্রের সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছিলেন মানিক। তাঁরই তদ্বিরে ‘কারকাস রিকভারি’ নামে একটি সোসাইটি কেন্দ্রের কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব পেয়েছিল। কিন্তু মানিকের উপর নজরদারির বা প্রশ্ন করার কেউ ছিল না। অভিযোগ, তাঁর ক্ষমতা এতটাই ছিল যে, তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রের কেউ মুখ খুলতে সাহস করতেন না। ডিরেক্টরেট ছিল কলকাতায়। ফলে, অবৈধ কাজ ডালপালা মেলার সুযোগ পেয়েছিল বলে গোয়েন্দারাও জানিয়েছেন। চামড়া প্রক্রিয়াকরণের জন্য ওই কেন্দ্রে মৃত পশু আনা হত। নিয়ম ছিল, মাংস পুঁতে দিয়ে হাড় ও চামড়া কাজে লাগানো। কিন্তু তদন্তে জানা গিয়েছে, তা হত না। মরা পশুর মাংস পাচার হয়ে যেত বনগাঁ, পার্শ্ববর্তী মুর্শিদাবাদে। গন্ধে টেঁকা দায় ছিল আশপাশের বাসিন্দাদের।
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, এই কাজে কাঁকিনাড়ার একজন মানিকের সঙ্গী ছিলেন। গয়েশপুর পুর এলাকার এক ব্যক্তিও সোসাইটির কাজে জড়িত ছিলেন। ভাগাড় কাণ্ড সামনে আসার পর থেকে এঁদের পাত্তা নেই। ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ দিন কয়েক আগে এসে কেন্দ্রে মানিকের বসার ঘরটি ভেঙে দিয়ে গিয়েছে।
ভাগাড়-কাণ্ডের ছায়া পড়েছে মুর্শিদাবাদের কান্দিতেও। মঙ্গলবার সকালে কান্দি মহকুমা হাসপাতাল সংলগ্ন একটি মাংসের দোকানে মৃত ছাগলের মাংস বেচতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে যান মাংস বিক্রেতা চারু শেখ ও শাহজাদ শেখ। কালাচাঁদ নামে তৃতীয় এক অভিযুক্ত পালিয়েছেন। শাহাজাদ একঘরিয়া থেকে একটি মরা ছাগল এনে চারু ও কালাচাঁদকে পাঁচশো টাকায় বিক্রি করে। সেই ছাগলের মাংস বেচার সময় গ্রিন পুলিশ ফজল শেখ তাঁদের ধরে ফেলেন। কান্দি পুরসভার ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান সান্ত্বনা রায় বলেন, “কান্দি শহরের সমস্ত হোটেল ও রেস্তরাঁয় খাবারের মান যাচাই করতে অভিযান করা হবে।” ভাগাড়-কাণ্ডে বহরমপুর শহরে মাংসের তৈরি খাবারের চাহিদা গত কয়েক দিনে কমে গিয়েছে। মোমো বিক্রেতা নিরঞ্জন হালদার জানান, তাঁর ৬ কেজি মুরগির মাংস লাগত। এখন দেড় কেজি। বহরমপুর শহরের সার্কিট হাউসের কাছে এক রেস্তরাঁর কর্তা মান্তু দাস বলেন, “অনেক বোঝাচ্ছি, তবুও বহু খদ্দের মাংসের পদ নিতে চাইছেন না।”