ডিমের মেনু বদলে কর্মিসভায় ফ্রায়েড রাইস

ডিমের ডালনা থেকে সটান ফ্রায়েড রাইস-চিকেন কষা। রেজিনগর থেকে হরিহরপাড়া—মুর্শিদাবাদ জেলায় শাসক দলের লাঞ্চবক্সের উত্তরণটা ঘটে গিয়েছে সাকুল্যে তিন মাসে। তবে, দলীয় কর্মীদের অনেকেই জানাচ্ছেন, কষা-চিকেনটা নিছকই ‘প্রচার’। নিতান্তই মুরগির ঝোলের দাপটে একেবারে থসথসে হয়ে গিয়েছিল মাঝারি মাপের সাদা প্যাকেটটা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৫ ০০:১৮
Share:

সভা শেষে খোলা প্যাকেটের ছড়াছড়ি।— নিজস্ব চিত্র।

ডিমের ডালনা থেকে সটান ফ্রায়েড রাইস-চিকেন কষা।

Advertisement

রেজিনগর থেকে হরিহরপাড়া—মুর্শিদাবাদ জেলায় শাসক দলের লাঞ্চবক্সের উত্তরণটা ঘটে গিয়েছে সাকুল্যে তিন মাসে।

তবে, দলীয় কর্মীদের অনেকেই জানাচ্ছেন, কষা-চিকেনটা নিছকই ‘প্রচার’। নিতান্তই মুরগির ঝোলের দাপটে একেবারে থসথসে হয়ে গিয়েছিল মাঝারি মাপের সাদা প্যাকেটটা।

Advertisement

খান দুয়েক গার্ডারের আঁটোসাঁটো বাঁধন খুলতেই সেই প্যাকেট থেকে তাই উথলে উঠছে কুচি গাজর-বিনে সমৃদ্ধ সরু চালের ফ্রায়েড রাইস। কষা মাংসের আড়ালে গরগরে সেই মুরগির ঝোল আর গোল করে কাটা দু-টুকরো শশা-পেঁয়াজ। গলা ভারী করে ঘাম-সিক্ত ব্লক-নেতা যাকে বলছেন, ‘ছেলাড’ (স্যালাড)।

কিন্তু চাটনি? শামিয়ানার আড়ালে প্যাকেট বিলি করা কর্মীটি কপালের ঘাম মুছে সটান বলে দিচ্ছেন, ‘‘ছিল গো, গাছ-পাড়া সাগুল্লা আমের চাটনিও ছিল। শর্ট পড়ে গেছে তো, তাই সব প্যাকেটে দেওয়া যায়নি।’’

অপ্রাপ্তিতে অবশ্য বরাত খুলেছে অনেকের। তাঁরা বলছেন, ‘‘ঝোলে-ছেলাডে একেবারে মাখামাখি হয়ে গেছে গো, এর পরে আমের চাটনি থাকলে রাইসটা খাওয়াই যেত না।’’

মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় তৃণমূলের কর্মীসভায় শুভেন্দু অধিকারী।
শনিবার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

শনিবার, হরিহরপাড়ায় তৃণমূলের কর্মী সম্মেলনে ঝোল সপসপে সেই ‘কাঙ্খিত’ প্যাকেট নিয়েই রই রই পড়ে গিয়েছিল। শেষ দুপুরে, বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ দলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী যখন মঞ্চে উঠছেন তখন, ঝোল-হাত গুঁড়ো সাবানে ধুয়ে সম্মেলন ফাঁকা করতে শুরু করেছেন কর্মীরা।

যা দেখে দলের এক তাবড় জেলা নেতা জিভ কাটছেন, ‘‘কী ঝামেলা বলুন তো, চিকেন কষা-ফ্রায়েড রাইসের গন্ধও শুকোল না, সভা ফাঁকা করে দিল!’’

‘মেনু’র জোরে কর্মী সম্মেলন ভরানোর রেওয়াজ, মুশির্দাবাদে অন্তত নতুন নয়। গত মার্চেই ভাত, ঘন মুগের ডাল, আলু ভাজা, ডিমের ডালনা আর টোম্যাটোর চাটনি সাজিয়ে রেজিনগরের কর্মিসভা কানায় কানায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। সে সভায় ‘লোক টানতে’, সম্মেলনের শুরুতে একপ্রস্ত জোড়া কলার সঙ্গে এক টুকরো কেক বিলিয়ে কর্মীদের মন পেতে ফাঁক রাখেননি দলীয় নেতারা।

তবে, সেই কর্মিসভায় আচমকা, বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা হুমায়ুন কবীরের নামে জয়ধ্বনি দিয়ে ঈষৎ চোনা ফেলে দিয়েছিলেন এক দলীয় কর্মী।

সেই ফর্মুলা মেনেই, জেলা পর্যবেক্ষকের সামনে সভা সফল করতে হরিহরপাড়া ব্লক সভাপতি সামসুজ্জোহা বিশ্বাস এ দিন আয়োজনের ত্রটি রাখেননি। বলছেন, ‘‘দূর থেকে কর্মীরা আসবেন তো, তাই নিজেরাই ৩০ টাকা করে চাঁদা তুলে ফ্রায়েড রাইস-মাংসের মেনু করেছিলাম।’’

তবে, তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী অবশ্য কটাক্ষ করছে, ‘‘ফ্রায়েড রাইসের স্পনসর তো স্থানীয় তিন ঠিকাদার!’’ জেলা নেতারা এমন কোনও অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি।

সামসুজ্জোহা বলছেন, ‘‘প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্যাকেটের অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। সবাই পেট ভরে খেয়েছেন।’’

দলের অন্দরের খবর, আয়োজন হলেও মেঘলা আকাশ দেখে অনেকেই আর সম্মেলনমুখো হননি। তাই বিকেল পর্যন্ত থেকে যাওয়া অনেকেরই বরাত খুলে গিয়েছে। ঘরমুখো কর্মীদের বাঁধা গামছায় তাই চোখে পড়েছে ফ্রায়েড রাইস-চিকেন কষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন