এ সবই পাঠানো হচ্ছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে। নিজস্ব চিত্র।
বারান্দার কোনে কাঠের উনুনে রান্না চাপিয়েছেন দিদিমনি। ঘরের ভিতরে তখন দু’চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছে কচিকাঁচাদের। ধোঁয়ায় ভরে যাওয়া ঘরটার ভিতরে খুকখুক করে কাশতে শুরু করে দিয়েছে কেউ কেউ। চোখ মুছতে মুছতে প্রায়ই উড়ে আসে প্রশ্নটা—‘ও দিদিমনি রান্না কখন শেষ হবে?’
খুব শীঘ্র নদিয়ায় এই ছবি এ বার বদলাতে চলেছে। অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্রে উনুন নয় গ্যাসে রান্নার ব্যবস্থা চালু করছে প্রশাসন। সম্প্রতি অতিঅপুষ্ট বাচ্চাদের জন্য দুধ ও তাদের মায়েদের জন্য ডিম দেওয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। প্রাথমিক ভাবে জেলার পাঁচশোটি কেন্দ্রে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। ধাপে ধাপে বাকি কেন্দ্রগুলিতেও তা সংযোগ দেওয়া হবে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে নদিয়ায় আসার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁকে দিয়েই এ প্রকল্পের উদ্বোধন করানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। এর আগে হাইস্কুলগুলির পাশাপাশি প্রাথমিক স্কুলগুলিতে ধোঁয়া থেকে মুক্তি পেতে মিড ডে মিলের জন্য গ্যাসে রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অঙ্গনওয়াড়িতেও এ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় খুশি কর্মীরা।
নদিয়ায় মোট অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৬২০টি। তার মধ্যে নিজস্ব ঘর আছে ১৯৩০টি কেন্দ্রর। ২৫০টি কেন্দ্রের ঘর তৈরি হচ্ছে। যে সব কেন্দ্রের নিজস্ব ঘর আছে প্রাথমিক ভাবে তেমন পাঁচশো কেন্দ্রকে বেছে নিয়ে এই প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। সীমান্ত ঘেঁষা কাঁদিপুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী দীপালি টিকাদার বলেন, “এটা খুবই ভাল উদ্যোগ। আমাদের তো কাঠে রান্না করতে হয়। পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি ধোঁয়ায় বাচ্চারাও বড় কষ্ট পায়। এ বার সেই কষ্ট ঘুচবে।”
যে সমস্ত কেন্দ্রের নিজস্ব বাড়ি আছে, সেখানে রান্নার আলাদা ব্যবস্থা থাকলেও বেশিরভাগ কেন্দ্রেই রান্না হয় বারান্দায়। বর্ষায় কাঠ ভিজে যায়। রান্না করা কঠিন হয়ে পড়ে। শীতকালে জানলা-দরজা বন্ধ থাকায় ধোঁয়া বেরোতে পারে না। কষ্ট হয় শিশুদের। এ সব ভেবেই এমন উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প আধিকারিক ভাস্কর ঘোষ। তিনি বলেন, “প্রাথমিক খরচ দেওয়া হচ্ছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের বিভিন্ন তহবিল থেকে। তার পরে জ্বালানির খরচ থেকেই গ্যাসের দাম উঠে আসবে। পরে আমাদের আর কোনও খরচ দিতে হবে না।”
প্রতিটি কেন্দ্রে এই ব্যবস্থার জন্য প্রাথমিক ভাবে খরচ হচ্ছে ৩ হাজার ২৪৫ টাকা। একটা সিলিন্ডারের সঙ্গে ওভেন, দু’মিটারের পাইপ ও একটি লাইটার দেওয়া হবে। প্রাথমিক ভাবে খরচ হবে প্রায় ১৬ লক্ষ ২২ হাজার টাকা। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঠিকানায় কর্মীর নামে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে যে সব কেন্দ্রের কর্মীর নামে আগেই গ্যাসের সংযোগ আছে সে সব ক্ষেত্রে বিকল্প কী ব্যবস্থা হতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।
নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি শিশুদের কষ্ট দূর করতেই আমরা এই প্রকল্পের উপরে জোর দিচ্ছি।” নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট এলপিজি ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পার্থকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “স্কুলগুলির মতই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে গ্যাস সরবরাহে যাতে কোনও রকম সমস্যা না হয় তার জন্য আমরা সব রকম ভাবে চেষ্টা করব।’’