জিএসটিতে নাকাল দোকানি

কোপ পড়বে সরপুরিয়া, মনোহরায়

এ বার ব্যবসাই লাটে ওঠার জোগাড়, বলছেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। বিশেষত ছানায় গড়া বাংলার রসালো মিষ্টির। সৌজন্যে জিএসটি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৭ ০২:৪৩
Share:

১৯৫৫ সাল। হইহই করে মুক্তি পেয়েছে বাংলা ছবি ‘সবার উপরে’। শেষ দৃশ্যে ছবি বিশ্বাসের সংলাপ তখন লোকের মুখে মুখে— ‘আমার কুড়িটা বছর ফিরিয়ে দাও’।

Advertisement

ছবির শুটিং হয়েছিল কৃষ্ণনগরে অধরচন্দ্র দাসের মিষ্টির দোকানে। সেই অধরচন্দ্র, যিনি নাকি ‘রেসিপি’ চুরি যাওয়ার ভয়ে গভীর রাতে দরজা বন্ধ করে তৈরি করতেন সরপুরিয়া, সরভাজা। রেসিপি ফাঁস অবশ্য শেষ পর্যন্ত ঠেকানো যায়নি। তাতে ব্যবসা বেড়েছে বই কমেনি।

কিন্তু এ বার ব্যবসাই লাটে ওঠার জোগাড়, বলছেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। বিশেষত ছানায় গড়া বাংলার রসালো মিষ্টির। সৌজন্যে জিএসটি।

Advertisement

মিষ্টি থেকে জিএসটি প্রত্যাহারের দাবিতে মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা সোমবার রাজ্য জুড়ে এক দিনের ধর্মঘট পালন করেছেন। নবদ্বীপের লালদই থেকে কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া, বহরমপুরের ছানাবড়া, শান্তিপুরের নিখুঁতি, কান্দির মনোহরা, রানাঘাটের পান্তুয়া সব বন্ধ। ভিয়েনে কড়াই চাপেনি। দোকানের সামনে খদ্দেরের উঁকিঝুঁকি। পিছনের দরজা দিয়েও যদি গরম শিঙাড়া-কচুরি মেলে। ও সব তো মিষ্টি নয়! কথা তুলতেই রে-রে করে উঠলেন ‘নবদ্বীপ মিষ্টান্ন এবং দই ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি রামকৃষ্ণ ঘোষ ও সহ-সভাপতি ভজহরি পোদ্দার— ‘‘শিঙাড়া, কচুরি, ডালপুরির মতো খাবারে ১২ শতাংশ হারে জিএসটি বসানোর প্রস্তাব রয়েছে। রসগোল্লা, সন্দেশ, দইয়ে ৫ শতাংশ। সন্দেশে চকোলেট, ক্ষীর বা তবকে দিলে ২৮ শতাংশ জিএসটি দিতে হবে!”

কিন্তু জিএসটি তো সব কিছুর উপরেই কমবেশি বসানো হচ্ছে। মিষ্টি ব্যবসায়ীরা এতো হায়-হায় করছেন কেন? জবাবে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা দু’টো সমস্যার উপরে জোর দিচ্ছেন। নদিয়া জেলা মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সম্পাদক তাপস দাস বলেন, “মিষ্টির মতো পচনশীল দ্রব্যে জিএসটি চালু করার কী অর্থ? দাম বাড়লে ক্রেতারা মুখ ফেরাবেন। তা ছাড়া, বড় অংশের মিষ্টি ব্যবসায়ীই গাঁয়ের মানুষ। জিএসটি-র কম্পিউটার বিল, রিটার্ন এ সব বুঝতেই পারবেন না। দোকান বন্ধ করে দিতে হবে।”

রাজ্যের মিষ্টি ব্যবসায়ীদের মতে, অনেক রাজ্যেই ক্ষীরের তৈরি শুকনো মিষ্টি হওয়ায় সমস্যা কম। কান্দির বিখ্যাত ‘মনোহরা’ ছানা আর চিনির যুগলবন্দিতে তৈরি। খেতে কোনও পরিশ্রম নেই, মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়। কিন্তু রাত পোহালেই তার মনোহরণ ক্ষমতা শেষ। মুর্শিদাবাদের মনোহরা বিশেষজ্ঞ কার্তিক রুজ বা রাজকুমার দত্তের কথায়, “এ তো আর ক্ষীরের প্যাঁড়া কিংবা লাড্ডু নয় যে দিনের পর দিন শো-কেসে থাকবে। মিষ্টি পচে যাবে, দোকানদার ফেলে দেবে। তবু জিএসটি দিতেই হবে?”

মিষ্টি ব্যবসায়ীরা বলছেন, হয় দাম বাড়বে অথবা মিষ্টির সাইজ বা মানের সঙ্গে আপস করতে হবে। এটা ক্রেতারা কি মানবেন? দুই জেলায় কমবেশি কয়েক হাজার মানুষ মিষ্টি ব্যবসায় নির্ভরশীল। তাঁদের রুটিরুজি প্রশ্নচিহ্নের মুখে। বৃহস্পতিবার থেকে ধর্মতলায় তিন দিনের রিলে অনশনে বসছেন রাজ্যের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা। মধুরেণ সমাপয়েৎ হয় না কি তিক্ত অভিজ্ঞতা, বোঝা যাবে তার পরেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন