তৃণমূলেরই হাতে রইল হরিণঘাটা 

হরিণঘাটায় তৃণমূলের সংসারে ভাঙনের বড় কারণ ছিল পুরপ্রধান রাজীব দালালের প্রতি কাউন্সিলরদের বড় অংশের ক্ষোভ। দলেরই নির্দেশে দিন কয়েক আগে রাজীব পদত্যাগ করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

হরিণঘাটা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৯ ০১:৩৮
Share:

ফল প্রকাশের পরে বিজেপিতে চলে যাওয়া কাউন্সিলরদের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ তৃণমূল কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র

কয়েক দিনের টানটান উত্তেজনার শেষে হাঁফ ছাড়ল তৃণমূল। রাজাবদল করে হরিণঘাটা পুরসভা নিজেদের দখলে রাখল তারা।

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ কেন্দ্র বিজেপির দখলে যাওয়ার পরেই ১৭ আসনের এই পুরসভার আট তৃণমূল সদস্য দলবদল করেন। আর এক জনকে টানতে পারলেই বোর্ড ছিনিয়ে নিতে পারত বিজেপি। পুরপ্রধান বদল করে ভোটে গিয়েছিল তৃণমূল। বুধবার ভোটাভুটির পরে দেখা যায়, এক ভোটে গড় রক্ষা করেছে তৃণমূল।

হরিণঘাটায় তৃণমূলের সংসারে ভাঙনের বড় কারণ ছিল পুরপ্রধান রাজীব দালালের প্রতি কাউন্সিলরদের বড় অংশের ক্ষোভ। দলেরই নির্দেশে দিন কয়েক আগে রাজীব পদত্যাগ করেন। এ দিন তৃণমূলের পুরপ্রধান পদপ্রার্থী মানিক ভট্টের পক্ষে ন’জন ভোট দিয়েছেন। এক ভোটে পরাজিত হয়েছেন বিজেপির পুরপ্রধান পদপ্রার্থী দিলীপ রায়। তৃণমূলের পুনরুজ্জীবিত বোর্ডে মানিকই পুরপ্রধান হলেন।

Advertisement

বছর চার আগে গঠিত হরিণঘাটা পুরসভার ভোটে সব ওয়ার্ডে অনায়াস জিতেছিল তৃণমূল। নিজেদের মধ্যে গোলমালের জেরে সেই সুখের সংসার ভেঙেছে। রাজীব পদত্যাগ করতেই নতুন প্রধান নির্বাচন নিয়ে দু’পক্ষ ঘুটি সাজাতে শুরু করে। তৃণমূলের আর দু’এক জনকে জোগাড় করার জন্য উঠে-পড়ে লাগে বিজেপি। দলের এক কাউন্সিলর ব্যক্তিগত ভাবে তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে মুকুল রায়ের হাত ধরে দলবদলের প্রস্তাব দেন।

অন্য দিকে, শহর তৃণমূলের সভাপতি উত্তম সাহা বাকি সব কাজ ছেড়ে ন’জন কাউন্সিলরকে আগলে রেখেছিলেন। প্রায়ই দিনে একাধিক বার তিনি টিকে থাকা কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে তিনি সকালে পুরসভায় যেতেন। এমনকি কাউন্সিলরদের চাকদহে নিয়ে গিয়ে জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেন। এ দিন চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে দু’দলই কাউন্সিলরদের এক জায়গায় রেখে দেয়। পরে দল বেঁধে প্রথমে পুরসভায় ঢোকেন তৃণমূলের ন’জন কাউন্সিলর।

বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ বিজেপির আট কাউন্সিলর এক সঙ্গে এসে ঢোকেন। পুরসভার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি শিবিরে যাওয়া কাউন্সিলর মীনাক্ষ্মী দে দাবি করেন, তৃণমূলের একাধিক কাউন্সিলর তাঁদের পক্ষে ভোট দেবেন। কিন্তু দুপুরে ব্যালট গুনে দেখা যায়, সে সব কিছুই হয়নি। বিজেপির দু’এক জন কাউন্সিলর আড়ালে-আবডালে বলছেন, ‘‘দিলীপদাকে পুরপ্রধান পদপ্রার্থী না করলে হয়ত এক জন বিজেপির পক্ষে ভোট দিতেন।’’

এ দিন গোটা জেলা থেকে তৃণমূল নেতারা এসে হাজির হয়েছিলেন পুরসভার সামনে। পুলিশের বহর দেখে মনে হচ্ছিল, পুরভোট হচ্ছে। পরে সদ্য নির্বাচিত পুরপ্রধান মানিক ভট্টকে পাশে বসিয়ে দলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলর রায় দিলেন।’’

ভোটের ফল বেরনোর পরেই এত দিন মিইয়ে থাকা তৃণমূল চাঙ্গা হয়ে ওঠে। পুরসভার সামনে বিজেপির পতাকা খুলে দেয় তারা। পুরসভার একাধিক দুর্নীতি নিয়ে বিজেপির টাঙানো ব্যানারও খুলে দেওয়া হয়। উত্তম বলেন, ‘‘এই জয় হরিণঘাটা বিধানসভা এলাকায় দলকে অক্সিজেন দিল। যে ভাবে বিজেপি আমাদের কার্যালয় দখল করছিল, এ বার আর তা পারবে না। সব কর্মীরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছেন।’’ তবে মীনাক্ষ্মী দাবি করেন, ‘‘আমরা এখনও কিছু করিনি। তৃণমূল নিজেই আগের প্রধানকে সরিয়ে ভোটে গিয়েছিল। নতুন পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে আমরা তাঁকে সরিয়ে দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন