নিশানায় নেতা

‘স্যর’ শুনে মুখ ঘোরাতেই গলায় কোপ

দুর্যোগের আবহাওয়ায় খুব কেউ রাস্তায় নামেননি। এর মধ্যেই সন্ধে নাগাদ শান্তিপুরের কাঁসারিপাড়ার বাড়ি থেকে বের হয়েছিল রিকশাটা। অন্ধকার প্রায় নেমে এসেছে। পরিচিত রিকশাচালকের সঙ্গে টুকটাক কথা বলছেন আরোহী। 

Advertisement

সম্রাট চন্দ

শান্তিপুর শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৮
Share:

অসমঞ্জ দে (বাঁ দিকে)। যে রাস্তায় খুন হন তিনি। নিজস্ব চিত্র।

বিকেল থেকেই হালকা বৃষ্টি। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া।

Advertisement

দুর্যোগের আবহাওয়ায় খুব কেউ রাস্তায় নামেননি। এর মধ্যেই সন্ধে নাগাদ শান্তিপুরের কাঁসারিপাড়ার বাড়ি থেকে বের হয়েছিল রিকশাটা। অন্ধকার প্রায় নেমে এসেছে। পরিচিত রিকশাচালকের সঙ্গে টুকটাক কথা বলছেন আরোহী।

টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে।

Advertisement

আধো আঁধারে রিকশা এগোচ্ছে পাবলিক লাইব্রেরির বিপরীতে তৎকালীন কংগ্রেস অফিসের দিকে। কাঁসারিপাড়া থেকে প্রায় ৫০০ মিটার গেলে চৌমাথা। ডান হাতে সরু গলি তর্কবাগীশ লেন। সে দিকেই মোড় নিল রিকশা। ঠিক গলিতে ঢোকার মুখে কেউ একটা রিকশা টেনে ধরল, “স্যর, শুনছেন?”

রিকশা থামল। ডাক শুনে পিছন ফিরলেন আরোহী। আর সঙ্গে-সঙ্গে নেমে এল ধারালো অস্ত্রের কোপ। প্রথমে গলায়। আচমকা আক্রমণে হতভম্ব চালক আর আরোহী দু’জনেই। কয়েকটি যুবক রিকশা থেকে টেনে নামাল আরোহীকে। তার পর একের পর এক কোপ নেমে আসতে লাগল বুকে-গলায়। তাতেই ক্ষাম্ত হল না আততায়ীরা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে দেওয়া হল হাত ও পায়ের শিরা।

দিনটা ২৬ মে, ১৯৮৪।

শান্তিপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র যে ডাকঘর, তার কাছেই রাস্তায় খুন হয়ে গেলেন শান্তিপুরের প্রাক্তন বিধায়ক ও প্রাক্তন পুরপ্রধান অসমঞ্জ দে।

অসমঞ্জের বরাবরের অভ্যেস ছিল শান্তিপুরেরই বাসিন্দা খোকন দাস ওরফে সাহেবের রিকশায় যাতায়াত করা। শান্তিপুর কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক তিনি। রাজনীতি তাঁর নেশা। সে দিনও দুর্যোগের মধ্যেই যাচ্ছিলেন কংগ্রেস পার্টি অফিসে, রোজকার মতোই। অন্ধকার গলির মুখে ওত পেতে ছিল আততায়ীরা।

এলাকারই কিছু লোকজন রাস্তা থেকে তুলে শান্তিপুর হাসপাতালে নিয়ে যান অসমঞ্জকে। খানিক বাদে সেখানেই তিনি ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। যেখানে তিনি যাচ্ছিলেন, সেই কংগ্রেস কার্যালয়েই তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয়। রাতভর সেখানেই শায়িত ছিল মৃতদেহ। রাতজাগা চোখে দেখেও যা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সহকর্মী নেতাকর্মীরা।

প্রথমে শান্তিপুরের ওরিয়েন্টাল স্কুল, পরে শান্তিপুর কলেজের জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন অসমঞ্জ। ১৯৭২ থেকে পাঁচ বছর শান্তিপুরের কংগ্রেস বিধায়ক। তার পর ১৯৭৮ অবধি পুরপ্রধান। এর মধ্যেই এক বার খুনের মামলায় গ্রেফতার হন। ১৯৭৭ সালে তাঁকে আর বিধানসভায় টিকিট দেয়নি দল। সে বারই রাজ্যে পালাবদল হয়। শুরু হয় বাম জমানা।

এ হেন অসমঞ্জ দে-র খুনের পরে প্রত্যাশিত ভাবেই অশান্ত হয়ে উঠেছিল শান্তিপুর। আক্রান্ত হয়েছিল সিপিএম দফতর। রাস্তা অবরুদ্ধ হয়েছিল। পরের দিন জনসমুদ্রের চেহারা নিয়েছিল শোকমিছিল। বাবলু চৌধুরী নামে শান্তিপুরের এক নির্দল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল। পরে তিনিও খুন হয়ে যান।

ছয় ভাইয়ের মধ্যে অসমঞ্জ ছিলেন সেজো। বিয়ে করেননি। শান্তিপুরের বর্তমান পুরপ্রধান, কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে চলে যাওয়া অজয় দে তাঁর ভাই।

আজও অজয় আক্ষেপ করেন, “দাদাকে এক সময়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। কিন্তু দাদার খুনের কিনারা আর হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন