Human hair smuggling

এ পার থেকে যাচ্ছে গোছা গোছা চুল, ও পার থেকে আসছে সোনার বিস্কুট! আজব কারবার নদিয়ায়

বিএসএফ সূত্রে খবর, হাতিশালা ১ এবং ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিলিয়া এবং চাপড়া ব্লকে মানুষের চুলের কারবার বেশ সক্রিয়। দাবি, জেলার ওই ছোট্ট জনপদে অন্তত ১২ হাজার পরিবার এই কারবারের সঙ্গে জড়িত।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

চাপড়া শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:১৩
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কখনও ঘাসের বস্তায়, কখনও আবার প্যাকেটবন্দি করে কাঁটাতারবিহীন এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের মাথার চুল। আর তার বিনিময়ে পড়শি দেশ থেকে এ পারে ঢুকছে গুচ্ছ গুচ্ছ সোনার বিস্কুট। নদিয়ার চাপড়া এবং আন্দুলিয়ার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত জুড়ে এই ‘বিনিময় প্রথা’তেই নাকি পাচারের রমরমা কারবার চলছে! এমন তথ্য উঠে এল সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের তদন্তে।

Advertisement

বিএসএফের অবশ্য দাবি, বাহিনীর তৎপরতায় সাম্প্রতিক কালে মানুষের চুল পাচারের কারবার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইডি একে আর্য বলেন, ‘‘মানুষের চুলের পাচারচক্র অনেকটাই বন্ধ করা গিয়েছে। ফের এই চক্রের সক্রিয়তা শুরু হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’

বাহিনীর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাথা আঁচড়ানোর সময় উঠে আসা চুল অনেকেই জমিয়ে রেখে দেন। ফেরিওয়ালারা সেই সব চুল কেনেন অল্প দামে। স্যাঁলোতে কাটা চুলও সংগ্রহ করেন ফেরিওয়ালারা। পরে সেই চুলই পাড়ি দেয় বিদেশে। আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা কেজি দরে কেনা চুল সীমান্ত পেরোলেই ২০-২৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। সীমান্ত পেরিয়ে আসা সেই চুলের দাম মেটানো হয় সোনার বিস্কুট দিয়ে। কয়েক বছর আগেও এই ব্যবসার দারুণ রমরমা ছিল। অতিমারিকালে লকডাউনের সময় এই ব্যবসা ক্ষতির মুখ দেখলেও, সম্প্রতি তা ফের সক্রিয় হতে শুরু করেছে। তা রুখতে তৎপরতা বাড়িয়েছে বিএসএফ। সূত্রের খবর, মানুষের চুল পাচারের অভিযোগে ধৃত কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই এই তথ্য উঠে এসেছে। এই পাচারচক্র রুখতে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য পুলিশও। তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য পুলিশের ‘এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্ট’ এবং গোয়েন্দা শাখা।

Advertisement

বিএসএফ সূত্রে খবর, হাতিশালা ১ এবং ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিলিয়া এবং চাপড়া ব্লকে মানুষের চুলের কারবার বেশ সক্রিয়। দাবি, জেলার ওই ছোট্ট জনপদে অন্তত ১২ হাজার পরিবার এই কারবারের সঙ্গে জড়িত। সারা বিশ্ব জুড়েই উইগ বা পরচুলার চাহিদা বেড়েছে সাম্প্রতিক কালে। গত এক দশকে বাংলাদেশেও তার বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে সেখানে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ ওই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারত থেকে পাচার হওয়া এই মানব চুল বাংলাদেশ হয়ে পৌঁছে যায় চিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াতেও। কিন্তু এই কারবারের লেনদেন সোনার বিস্কুট দিয়ে কেন হয়? বিএসএফ সূত্রের দাবি, মায়ানমার হয়ে চোরাপথে যে সোনা ঢোকে বাংলাদেশে, তার দাম স্বাভাবিক ভাবেই কম হয়। অন্তত ৩০-৩৫ শতাংশ কম ভারতের বাজারের সোনার দামের থেকে। যার ফলে, এ পারের কারাবারিরা মানুষের চুলের বিনিময়ে সোনা পেলে তাঁদের মুনাফার অঙ্ক অনেক বেশিই হয়।

প্রায় ২৫ বছর ধরে এই কারবারের সঙ্গে জড়িত চাপড়ার বড় আন্দুলিয়ার শিবিরপাড়ার মইনুদ্দিন শেখ (নাম পরিবর্তিত)। তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয়েরা প্রথম দিকে এই ব্যবসাকে খারাপ চোখে দেখতেন। পরে যখন তাঁরা দেখলেন, প্রচুর টাকা রোজগার করা যায়, তাঁরাও এই চুলের ব্যবসায় এলেন। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ থেকে সোনার আমদানিও শুরু হল।’’ তবে ও পার থেকে সোনা নিয়ে এ পারে ঢোকায় যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে বলেও জানাচ্ছেন কারবারিরা। এই কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছেন আশরাফ মণ্ডল নামে স্থানীয় এক যুবক। তাঁর এক আত্মীয় বলেন, ‘‘চুলের বদলে অনেক সময় সোনা দেওয়া হয়। আবার অনেকে বাড়তি লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়েই সোনা নিয়ে আসেন এ দিকে। আশরাফও এ ভাবেই বিএসএফের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন