জলেই মারণবীজ, স্ত্রীর স্মৃতিতে প্রকল্প স্কুলে

স্বপন ঘোষ বহরমপুরের বাগমারা মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্রের সম্প্রসারক। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে তাঁদের দশ মাসের ছেলে মারা যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৫
Share:

নতুন কলে জল ধরা। —নিজস্ব চিত্র।

মাস পাঁচেক আগে জলবাহিত হেপাটাইটিস-ই রোগে আক্রাম্ত হয়ে মারা গিয়েছেন এক স্কুল শিক্ষিকা। স্কুলের অন্য শিক্ষক বা পড়ুয়ারা আর যাতে ওই রোগে আক্রান্ত না হয়, তার জন্য স্কুলে পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্প করে দিলেন তাঁর স্বামী।

Advertisement

সম্প্রতি বহরমপুরের মদনপুর হাইস্কুলে এই জলপ্রকল্পের উদ্বোধন হয়। মৃত চন্দনা তালুকদার ২০০৬ থেকে সেখানে কর্মশিক্ষার শিক্ষিকা ছিলেন। বয়স হয়েছিল ৪৯ বছর। গত সপ্তাহে স্কুলে বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিল। গত শনিবার ছিল তার পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানেই জল প্রকল্পের উদ্বোধন হয়।

চন্দনার স্বামী, বহরমপুরের রাধারঘাটের বাসিন্দা স্বপন ঘোষ জানান, গত সেপ্টেম্বরে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়। তাই এই জলপ্রকল্প করার ভাবনা। একই চত্বরে মদনপুর হাইস্কুল এবং মদনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় দেড় হাজার পড়ুয়ার হাতে একটি করে জলের বোতলও তুলে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিসকুমার সরকার বলেন, “স্বপনবাবু তাঁর স্ত্রীর স্মৃতিতে একটি পরিশ্রুত পানীয় জলপ্রকল্প করতে দিতে চেয়ে আমাদের কাছে আবেদন করেছিলেন। স্কুল পরিচালন সমিতি তার অনুমোদন দেয়।”

Advertisement

স্বপন ঘোষ বহরমপুরের বাগমারা মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্রের সম্প্রসারক। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে তাঁদের দশ মাসের ছেলে মারা যায়। আর গত সেপ্টেম্বরে মৃত্যু হয় চন্দনার। তখন তিনি দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তার পর স্বপন ভাবছিলেন, অনেকের সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার কাজে লাগে এমন কিছু করবেন। তাঁর ইচ্ছে, এই প্রকল্পের জল হাইস্কুল ও প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা পাবে, আবার গ্রামের লোকজনও পাবেন।

বহরমপুরের দৌলতাবাদে মদনপুর হাইস্কুলে দেড় হাজার পড়ুয়া আছে। প্রাথমিক স্কুলেও শতাধিক পড়ুয়া রয়েছে। বর্তমানে স্কুলে টিউবওয়েল আছে। তবে পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্প এই প্রথম। হাইস্কুলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুধু স্কুলের পড়ুয়ারা নয়, এই পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্পের সুফল ভোগ করবেন গ্রামবাসীও। গ্রামের লোকজন যাতে সকাল-বিকালে ওই জল নিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা হবে। ওই হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, গ্রামের লোকজন স্কুলের জল নিলে তাঁদের সমস্যা হবে না।

মদনপুর গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় দু’হাজার। অনেক আগে জেলা পরিষদের পক্ষ মদনপুর হাইস্কুলের সামনে পরিশ্রুত পানীয় জল প্রকল্প তৈরি করেছিল। বছর তিনেক থেকে তা অকেজো। এই জল প্রকল্প হওয়ার ফলে এলাকার লোকজনের উপকার হবে। মদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মহম্মদ আকবর আলি বলছেন, “স্কুলে এরকম জল প্রকল্প যদি সত্যিই হয়ে থাকে, তো একটা কাজের কাজ হয়েছে। গোটা এলাকার মানুষের উপকার হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন