পরিচয়পত্র ছাড়া জামাই নো এন্ট্রি

ভোট দিতে গেলে লাগে ভোটার কার্ড। দূরপাল্লার ট্রেনে, মোবাইলের সিম কার্ড পেতে, এমনকী হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলেও ভোটার কার্ড দেখাতে হতে পারে। তা বলে শ্বশুরবাড়িতে জামাইষষ্ঠী করতে গেলে বাবাজীবনকে ভোটার কার্ড দেখাতে হবে? তাই হবে, যদি গ্রামের নাম হয় চরমেঘনা।

Advertisement

গৌরব বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৫ ০০:১৫
Share:

চরমেঘনা। —ফাইল চিত্র।

ভোট দিতে গেলে লাগে ভোটার কার্ড। দূরপাল্লার ট্রেনে, মোবাইলের সিম কার্ড পেতে, এমনকী হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলেও ভোটার কার্ড দেখাতে হতে পারে। তা বলে শ্বশুরবাড়িতে জামাইষষ্ঠী করতে গেলে বাবাজীবনকে ভোটার কার্ড দেখাতে হবে?

Advertisement

তাই হবে, যদি গ্রামের নাম হয় চরমেঘনা। নদিয়ার হোগলবেড়িয়া সীমান্তে কাঁটাতারের ওপারে ওই ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকতে গেলে বিএসএফকে দেখাতে হয় ভোটার কার্ড। জানাতে হয়, জামাই কতদিন থাকবেন শ্বশুরবাড়িতে।

এই সব ঝক্কি সামলেই শুক্রবার দুপুরে চরমেঘনায় এসেছেন উত্তর ২৪ পরগনার নিমাই সর্দার। পেশায় স্কুলশিক্ষক নতুন জামাই নন, বেশ কয়েকবার এসেছেন। তবু এখনও একটু টেনশন হয়। ‘‘হবে না? গরমে বাস-ট্রেনের ভিড় ঠেলে গ্রামে ঢোকার মুখে বিএসএফের যা চোখা প্রশ্ন করে!’’ বলছেন নিমাইবাবু।

Advertisement

শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিয়ের পরেই জামাইকে বলে দেন ভোটার কার্ডের বিষয়টি। স্থানীয় বাসিন্দা তথা হোগলবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সিপিএমের বুদ্ধদেব মণ্ডল জানান, বিয়ে, দ্বিরাগমন থেকে শুরু করে জামাইষষ্ঠী যখনই জামাই আসবেন, তখনই তাঁকে ভোটার কার্ড দেখাতে হবে।

কার্ড থাকলেও সমস্যা যে একেবারে মিটে যায় এমন নয়। কলকাতায় কর্মরত চরমেঘনার বাসিন্দা অনিমেষ মাহাতো জানান, জামাইয়ের হাতে ভোটার কার্ড রয়েছে। কিন্তু বিএসএফের হয়তো মনে হল, ভোটের কার্ডের ছবির সঙ্গে জামাইয়ের মুখের মিল নেই। তখন খবর যায় শ্বশুরবাড়ি। দেড় কিলোমিটার দূর থেকে ছুটতে ছুটতে কাঁটাতারের ওপারে হাজির হন শ্বশুরমশাই। তিনি গিয়ে জামাইকে সনাক্ত করেন। তারপরেই রেহাই পান জামাই। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এমনটা কতবার হয়েছে।

ভৌগোলিক ভাবে চরমেঘনা আর পাঁচটা গ্রামের মতো নয়। মেঘনা বিএসএফ ক্যাম্প থেকে প্রায় একশো মিটার দূরে ইন্দো-বাংলাদেশ বর্ডার রোড, কাঁটাতারের বেড়া। পাশেই রয়েছে বিএসএফের নজরদারি চৌকি। সেখানে ভোটার কার্ড দেখিয়ে বিএসএফের অনুমতি নিয়ে কাঁটাতারের গায়ের লোহার গেট থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার এগিয়ে গেলে চরমেঘনা। গ্রামের পিছনে মাথাভাঙা। তারপরেই বাংলাদেশ। বিএসএফের ৪৩ ব্যাটেলিয়নের এক কর্তা জানান, স্থানীয় মানুষের আবেগকে সম্মান দিয়েও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার কথাটাও মনে রাখতে হয়।

এ বার প্রথম ষষ্ঠী করতে চরমেঘনায় আসছেন মুর্শিদাবাদের প্রসেনজিৎ রায়। শ্বশুরমশাই বিমল বিশ্বাস জামাইকে শুক্রবার রাতেও ফোন করে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘ভোটের কার্ডটা কিন্তু মনে করে এনো বাবা। আমিও থাকব কাঁটাতারের এপারে। তেমন অসুবিধা হবে না।’’

জামাইষষ্ঠী কি মুখের কথা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন