লাশকাটা ঘর নিয়ে বিপাকে লালবাগ শহর

মরেও শান্তিতে নেই ওঁরা। আর লালবাগের লাশকাটা ঘর লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘মর্গ এখান থেকে না সরালে বেওয়ারিশ লাশের দুর্গন্ধে আমরাই কবে মরে যাব!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৭ ০১:৫২
Share:

আগাছা-ঘেরা: লালবাগের মর্গ।

মরেও শান্তিতে নেই ওঁরা।

Advertisement

আর লালবাগের লাশকাটা ঘর লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘মর্গ এখান থেকে না সরালে বেওয়ারিশ লাশের দুর্গন্ধে আমরাই কবে মরে যাব!’’

সম্প্রতি সিটি মুর্শিদাবাদ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির লোকজন মর্গের বনবাদাড় সাফাই অভিযানে সামিল হয়েছিলেন। কী অবস্থায় মর্গ রয়েছে তা দেখার জন্য তাঁরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন লালবাগের মহকুমাশাসক তোপদেন লালাকে।

Advertisement

মহকুমাশাসক সেখানে আসতেই মর্গ লাগোয়া বাড়ির বাসিন্দা স্বাতী সিংহ বলেন, ‘‘বেওয়ারিশ লাশের পাহাড় জমছে। দুর্গন্ধে থাকতে পারছি না। মর্গে দরজা-জানলা না থাকায় মাঝে মধ্যেই মৃতদেহ খুবলে নিয়ে কুকুরের দল লোকালয়ে ঘুরে বেড়ায়। পুলিশ-প্রশাসন কেউই তো কিছু দেখছে না।’’

ওই মর্গের ডোম পাপাই গঙ্গাপুত্রও মহকুমাশাসককে বলেন, ‘‘ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় এ ভাবে পড়ে থেকে বহু মৃতদেহ কঙ্কাল হয়ে যাচ্ছে।’’ ব্যবসায়ী সমিতির স্বপন ভট্টাচার্যের দাবি, এলাকার স্বার্থে ওই বসতি থেকে মর্গ স্থানান্তরিত করতে হবে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে। মহকুমাশাসকও আশ্বাস দেন, খুব শিগ্‌গির পুলিশ, পূর্ত দফতর-সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বৈঠক করে সমাধানের পথ বের করা হবে।

আরও পড়ুন

সাম্প্রতিকে ফিরছে জেলা, অতীত মুছতে মরিয়া ওয়েব

লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের মর্গের একটা অংশের দরজা, জানলা নেই। অয়ত্নে পড়ে থেকে মর্গের আশপাশে তৈরি হয়েছে আগাছার জঙ্গল। সেখানেই সাপখোপ ও মশার নিশ্চিন্ত আখড়া।

চিকিৎসকদের অনেকেই ওই মর্গের এমন বেহাল দশার কারণে ময়নাতদন্ত করতে চান না। কিন্তু বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরাও বাধ্য হন।

ঘরে পর্যাপ্ত মৃতদেহ রাখার ব্যবস্থা নেই। ফলে দেহ বারান্দায় রাখতে হয়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অযত্নে পড়ে থাকে দেহগুলো। দীর্ঘ দিন ধরে মর্গের বিদ্যুতের সংযোগ নেই। ফলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থাও না থাকায় বেওয়ারিশ দেহগুলো পচতে শুরু করে। লোকালয়ের মধ্যে ওই মর্গ থাকায় স্থানীয় লোকজন দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হন।

লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের সুপার অভিজিৎ দেওঘরিয়া বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের ব্যাপারটা আমাদের দেখার কথা। পরিকাঠামো দেখভাল কিংবা উন্নয়নের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পুলিশের।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সম্প্রতি স্থানীয় ওই ব্যবসায়ী সমিতি উদ্যোগী হয়ে মর্গের আগাছা পরিষ্কার করে দিয়েছে। কিন্তু সেটাই তো সব নয়। সামগ্রিক ভাবে এর একটা ব্যবস্থা করা খুব জরুরি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ) অংশুমান সাহা বলেন, ‘‘ওই মর্গের পরিকাঠামো উন্নতি করে অত্যাধুনিক করতে রাজ্য সরকারের কাছে একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, অল্প দিনের মধ্যে এই প্রকল্পের অনুমোদন মিলবে। তখন আর কোনও সমস্যা থাকবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন