মায়ের কোলে রাজা। নিজস্ব চিত্র
পুকুড় পাড়, ঘোষেদের মাঠ, আলপথ— ছুট ছুট...ছেলেটা হাঁফিয়ে পড়েছিল শেষতক। গ্রামের মাঠ থেকে তাকে যখন ধরে-বেঁধে ফিরিয়ে আনা হল, ধড়াস ধড়াস করছে খুদে বুক।
সে বার, বসন্তের টিকা দিতে গ্রামে স্বাস্থ্যকর্মীরা আসতেই রাজা শেখের সেই পলায়ন এখনও মনে আছে গ্রামের সক্কলের।
দিদির অস্ত্রোপচারের দিনে মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে পৌঁছে ডাক্তার ইঞ্জেকশনের তোড়জোড় করতেই ফের পালাল সেই রাজা।
এ বারও তার লম্বা দৌড় থমকে গিয়েছিল হাইওয়ের ধারে। দু’হাঁটুতে হাত রেখে হাপুস কাঁদছে ছেলে, সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ তাকে ফিরিয়ে এনেছে দিদির কাছে।
রবিবার দুপুরে জেদ করেই দিদির সঙ্গে নওদার গ্রামীণ হাসপাতালে এসেছিল রাজা। এটা সেটা ফাই ফরমায়েশ খাটতে পারবে ভেবে মা’ও আর বারণ করেননি। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছেই দিদির জন্য ইঞ্জেকশনের তোড়জোড় দেখে ভয়ে কেঁদে ফেলেছিল সে। সামাল দেওয়ার অবস্থা ছিল না মায়ের। সেই সুযোগে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে শুরু করেছিল ছুটতে। মেয়ে না ছেলে সামাল দেবেন কাকে? থতমত খেয়ে গিয়েছিলেন মা। সেই সুযোগে ইঞ্জেকশনের ভয়ে হাসপাতালের চৌহদ্দি ছেড়ে রাজা তখন পগাড়পার।
হরিহরপাড়ার মহিষমারা গ্রামের মানুফা বিবি বলছেন, ‘‘কী করব বলুন তো, কোন দিকটা সামাল দেব। ছেলেটা যে কোথায় গেল!’’
মেয়েকে অপারেশন টেবিলে নিয়ে যেতেই খোঁজ শুরু হয় মায়ের। কিন্তু ছেলে নেই কোত্থাও।
হাসপাতাল, আশপাশের দোকানপাট, বাজার ঘুরে অথৈ জলে মায়ের দু’চোখে তখন দুশ্চিন্তার জল। জনে জনে প্রশ্ন করে চলেছেন, ‘‘হ্যাঁ গো, কালো গেঞ্জি ও নীল প্যান্ট, বছর আটেক বয়স, ছেলেটাকে দেখেছ নাকি কেউ!’’
কথাটা কানে গিয়েছিল বিএমওএইচের। তিনিই উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয় পুলিশকে ঘটনাটি জানান। শুরু হয় পুলিশের খোঁজ। একটি দল তাকে খুঁজতে বেরোয় পাটিকাবাড়ি পথে। অন্য একটি পুলিশের জিপ ছোটে রায়পুরের রাস্তায়। প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে নওদার বাগাছাড়ায় পুলিশ জানতে পারে ছুটে চলেছে একটি ছেলে।
কিছু দূর ধাওয়া করতেই খোঁজ পায় ছুটন্ত ছেলেকে বাগে এনেছেন স্থানীয় গ্রামবাসী সালাম শেখ। পুলিশ খোঁজ পেয়ে সালামের বাড়ি পৌঁছে দেখে তখনও ভয়ে কেঁপে চলেছে ছেলেটি। নাম কী? রাজা শেখ। সটান জিপে চড়িয়ে ফিরিয়ে আনা হয় তাকে।