খুন ঠান্ডা মাথাতেই, জ্যোতিষীর যাবজ্জীবন

প্রভা দাস, বিজয়া বসু ও আত্রেয়ী বসু— বহরমপুরের ওই আবাসনের তিন মহিলা খুনের দায়ে, জেলা দায়রা বিচারক এ দিন তাকে ভারতীয় দণ্ডবিধির  ৪৪৮, ৩২৮, ৩৯২ এবং ৩০২  ধারায় সাজা দিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:০৮
Share:

সাজা ঘোষণার পরে নিত্যানন্দ দাস, শুক্রবার বহরমপুর আদালতে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল আগেই, বহরমপুরের আশাবরী আবাসনে তিন মহিলা খুনের মামলায় নিত্যানন্দ দাসকে শুক্রবার আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন বিচারক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

প্রভা দাস, বিজয়া বসু ও আত্রেয়ী বসু— বহরমপুরের ওই আবাসনের তিন মহিলা খুনের দায়ে, জেলা দায়রা বিচারক এ দিন তাকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৪৮, ৩২৮, ৩৯২ এবং ৩০২ ধারায় সাজা দিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করলেন।

জেলার মুখ্য সরকারি আইনজীবী দেবাশিস রায় জানান, বিচারক এই মামলার সব তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আসামী নিত্যানন্দ দাসকে ৪৪৮ নম্বর ধারায় এক বছর কারাবাস, ৩২৮ নম্বর ধারায় দশ বছর, ৩৯২ নম্বর ধারায় দশ বছর এবং ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিলেন। সমস্ত কারাদণ্ডগুলি একসঙ্গে চলবে বলে এ দিন বিচারক জানিয়েছেন। নিজেকে সংশোধনের কোনও লক্ষণ দেখা গেলেও আসামীকে কমপক্ষে কুড়ি বছর সশ্রম কারাবাস করতে হবে বলেই জানিয়েছেন বিচারক।

Advertisement

এ দিন ভিড় সামলাতে আদালতে ছেয়ে ছিল পুলিশ। ছিল অগুনতি মানুষের ভিড়ও। এ দিন অবশ্য আদালতে নিত্যানন্দের পক্ষে কোনও আইনজীবী হাজির ছিলেন না। আদালতে গরহাজির থাকার কারণ জানিয়ে নিত্যানন্দের অন্যতম আইনজীবী তপন জানা, টেলিফোনে জানান, তাঁদের অনুপস্থিতির কথা বিচারককে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা এ ব্যাপারে হাইকোর্টে আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

এ দিন আদালতের কাঠগড়ায় তুলে বিচারক নিত্যানন্দের কাছে জানতে চান, তিনি সর্বাধিক মৃত্যুদণ্ড না যাবজ্জীবন— কোনটা চান। নিত্যনন্দ তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে এ দিনও দাবি করতে থাকে, ওই খুনের ঘটনার সময়ে আদৌ ঘটনাস্থলে সে ছিল না। এর পর বিচারক তাকে নির্দিষ্ট উত্তর দিতে নির্দেশ করলে নিত্যানন্দ তার মা ও সন্তানের কথা বলে, কম সাজা দেওয়ার আবেদন জানায়।

সরকারি আইনজীবী, আদালতে বিভিন্ন বিরলতম খুনের মামলার রুলিংয়ের উদাহরণ এনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আবেদন করেন। তিনি দাবি করেন, এখন আসামী তার মা ও সন্তানের কথা তুলছেন, কিন্তু নিরীহ তিন মহিলা— বৃদ্ধা, মা ও কিশোরী মেয়েকে ঠান্ডা মাথায় খুন করতে তার হাত কাঁপেনি। ওর কোনও সংশোধন হয়নি। বরং সে জেল থেকে পালাতে চেষ্টা করেছে, তার বিরুদ্ধে আরও চারটে মামলা ঝুলছে। তাই তার প্রাণদণ্ড হওয়া উচিত বলে তিনি দাবি করেন। এর পর বিচারক আদালতের বিরতি ঘোষণা করে ফের বিকাল চারটের সময় সাজা ঘোষণা করবেন বলে জানালে আদালত কিছুক্ষণের জন্য মুলতুবি হয়ে যায়।

সরকারি আইনজীবী দেবাশিস রায় আসামীর নিত্যানন্দের সাজা সম্পর্কে বলেন, তাঁরা তিন সরকারি আইনজীবী গোরা সেন, প্রশান্ত দত্ত ও অভিযোগকারীর আইনজীবী শৈবেন্দ্র সরকার একযোগে সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করে নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে খুনের প্রমাণ করেছেন। তবে বিচারক মৃত্যুদণ্ড দিলে ভাল করতেন।

এ দিন আদালতে নিহত আত্রেয়ী বসুর বাবা দেবাশিস বসু ও আত্মীয় কৃষ্ণাশিস মিত্র দু’জনেই উপস্থিত ছিলেন। দু’জনেই জানান যে, মৃত্যুদণ্ড হলে ভাল হত, কিন্তু বিচারকের দেওয়া আমৃত্যু কারাদণ্ড খুশি হয়েছেন। তাঁরা বিচার পেয়েছেন।

নিত্যানন্দের মা অঞ্জলি দাস আদালতে রায় শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিন্তু নিত্যানন্দ জানান, তাকে বিনা দোষে সাজা দেওয়া হল। সে হাইকোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন জানাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement