উদ্বোধনে তারকার ভিড়, মণ্ডপে ঝাঁপাল কৃষ্ণনগর

এ ধরনের কথপোকথনের সঙ্গে  ঠিক পরিচিত নয় কৃষ্ণনাগরিকদের কাছে। সে ভাবে কোনও দিনই কোনও গায়ক-গায়িকা, অভিনেতা-অভিনেত্রীকে দিয়ে জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধন করার চল এত দিন তেমন ছিল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২০
Share:

মণ্ডপে মিমি। নিজস্ব চিত্র

চায়ের দোকানে রীতিমতো রোয়াব নিয়ে ঢুকল এক যুবক। বাঁকা চোখে তাকিয়ে বন্ধুদের উদ্দেশে তাঁর ঘোষণা, “কীরে তোদের কে আসছেন এ বার? আমাদের তো নচিকেতা এসেছিলেন। একবার যদি দেখতিস না। পাগলা করা!”

Advertisement

তাঁর কথা শেষ হতে না হতেই ঠোঁটে বিদ্রুপ এঁটে বলে ওঠে, “ছাড় ছাড়। আমরা মিমিকে আনছি । দেখিস কেমন ভিড় হয়!” টেবিলে থাপ্পড় মারে আর একজন, “ওরে থাম। আমরা আনছি মন্ত্রী। বুঝলি? বিদ্যুৎ মন্ত্রী আসছেন আমাদের পুজো উদ্বোধন করতে।”

এ ধরনের কথপোকথনের সঙ্গে ঠিক পরিচিত নয় কৃষ্ণনাগরিকদের কাছে। সে ভাবে কোনও দিনই কোনও গায়ক-গায়িকা, অভিনেতা-অভিনেত্রীকে দিয়ে জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধন করার চল এত দিন তেমন ছিল না। নেতা-মন্ত্রীদেরও আনাগোনা বিশেষ ছিল না। এ বার সেটাই শুরু হল দেখে কেউ ভুরু কুঁচকেছেন। কেউ সাদরে গ্রহণ করেছেন নতুন ধারাকে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরের জনপ্রিয় রায়পাড়া-মালিপাড়া বারোয়ারির পুজোর উদ্বোধন করতে এসেছিলেন গায়ক নচিকেতা। তা নিয়ে রীতিমতো সরগরম এলাকা। প্রীয় গায়ককে এক ঝলক দেখতে ভিড় জমে মণ্ডপের সামনে। কেউ কেউ সুযোগ বুঝে বাড়িয়ে দিয়েছেন অটোগ্রাফের খাতা।

সে রেশ মিটতে না মিটতে শুক্রবার বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় গোলাপট্টি বারোয়ারির পুজোর উদ্বোধন করেন। তারপরে রাধানগরের কৃষ্ণমাতা ও সব শেষে বাঘাডাঙা বারোয়ারির পুজো উদ্বোধন করেন।

টলিপাড়ার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী এসেছিলেন কালীনগরের ক্লাব অনন্যা-র পুজো উদ্বোধন করতে। অভিনেত্রী আসছেন সে খবর আগেই চাউর হয়ে গিয়েছিল। তাই অভিনেত্রীকে দেখার জন্য ও দিন ওই মণ্ডপে ভিড় যেন ভেঙে পড়ে। ভিড় কী ভাবে সামাল দেওয়া হবে তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় পড়েছিল পুলিশ-প্রশাসন। তবে এ দিন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

বছর পনেরো আগে কালীনগরের দিলু শর্মা তাঁর ক্লাব রেনবোর পুজোর উদ্বোধন মুম্বই থেকে উড়িয়ে নিয়ে এসেছিলেন জয়াপ্রদাকে। তারপর আর তেমন কোনও অভিনেতা-অভিনেত্রী বা গায়ক-গায়িকাকে পুজোর দিনগুলোয় পাননি শহরের মানুষ। বরং কৃষ্ণনাগরিকদের কাছে অনেক বেশি পছন্দের ছিল ভাসানের ‘সাঙ’।

তবে এই নতুন ধারাকেও সাদরে গ্রহণ করছে এই শহর। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কথায়, “সময়ের বদল হচ্ছে। তার সঙ্গে যদি পাল্লা দিতে না পারি তা হলে পিছিয়ে পড়তে হবে।’’

তবে কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর সুদীর্ঘ ঐতিহ্যে নতুন সংযোজন দেখে কেউ কেউ অবশ্য আক্ষেপ করছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘এখন সকলেই এসব চান। ঐতিহ্য নিয়ে এখন আর কারও মাথাব্যথা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন