ওঁরা ফিরেছেন, এটাই প্রাপ্তি

ওঁরা কখনও ভুলবেন না ফজরের নমাজ পড়তে উঠে আচমকা নিজের ভাড়াবাড়িতে কোমর সমান জল দেখে আঁতকে ওঠার মুহূর্তটা। 

Advertisement

সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০১:৪৪
Share:

—ফাইল চিত্র।

বুকজল পেরিয়ে ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে ঘরে ফেরার তিক্ত অভিজ্ঞতা ওঁরা কখনও ভুলবেন না। ওঁরা কখনও ভুলবেন না ফজরের নমাজ পড়তে উঠে আচমকা নিজের ভাড়াবাড়িতে কোমর সমান জল দেখে আঁতকে ওঠার মুহূর্তটা।

Advertisement

তবুও হাজারও যন্ত্রণা নিয়ে প্রায় ৭২ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে ওঁরা হাসছেন। চোখের সামনে চেনা কেরলটা অচেনা গিয়েছিল। কিন্তু চেনা ঘরে কিচ্ছুটি বদলায়নি। সব আগের মতোই আছে। যেমনটা তাঁরা দেখে গিয়েছিলেন। সেই মেয়ের আবদার, গিন্নির কপট রাগ, এমনকি বাড়ির সামনের রাস্তা কিংবা বাড়ির পিছনের সজনে গাছটাও। জলঙ্গির মাইনুদ্দিন, নাজিরুল, সিরাজুলরা বলছেন, ‘‘বুঝলেন কর্তা, মাঝে মধ্যে তো ভাবতেই পারছি না যে সত্যি সত্যিই বাড়ি ফিরে এসেছি। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও যে বাড়ি ফিরতে পারব, বাড়ির সকলের সঙ্গে ইদটা কাটাতে পারব, ভাবতেই পারিনি। আগামী দিন কয়েক কাজ থাকবে না। রোজগারও হবে না। কিন্তু বৃদ্ধ বাবা মা, ছোট্ট সন্তান, স্ত্রীর সঙ্গে দিনটা কাটাতে পারব, এটাই সবথেকে বড় কথা।’’

ডোমকল, জলঙ্গির অনেক শ্রমিক এ দিন ঘরে ফিরেছেন এক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে। চোখের সামনে ভেসে গিয়েছে মহল্লা। ভেসে গিয়েছে বাড়ির টিনের চালা, রান্নার হাঁড়ি। মাথার উপরে চক্কর কেটেছে হেলিকপ্টার। সেখান থেকে দেওয়া হয়েছে খাবার ও জল। মঙ্গলবার ঘরে ফিরে পরিবার ও পড়শিদের সেই পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে বার বার আঁতকে উঠেছেন নওদাপাড়ার মইনুদ্দিন মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে বাড়ির চালা, আসবাব, পোশাক, রান্নার সরঞ্জাম-সহ আরও কত কী। একটা সময় দেখলাম, ওই এলাকার দোতলা বাড়িগুলোও ডুবে গেল জলের তলায়।’’

Advertisement

অনেক কষ্ট, অনেক খারাপ অভিজ্ঞতার মাঝেও যেমন ইদে ঘরে ফেরার আনন্দ আছে, তেমনি মানবিকতার মুখও দেখেছেন এই সব বাঙালি শ্রমিকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘বিপদের সময় কেরলের মানুষ যে ভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে তা মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত মনে থাকবে। ওঁদের কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ।’’

নওদাপাড়ার নাজিরুল ইসলাম শেখের কথায়, ‘‘ফজরের নমাজ পড়তে উঠে দেখি কোমর সমান জল। এলাকার দোকান থেকে কেক, বিস্কুট জলের বোতল, চাল, ডাল কিনে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। বলেছিল, এগুলো সবাইকে দিয়ে খাবে। ওরা যা করেছে তা কোনও দিন ভুলতে পারি, বলুন?’’

তবে এ বারের ইদে অনেকেই উপহার, পোশাক নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেননি। তবে তাঁদের বাড়ির লোকজন বলছেন, ‘‘ও সব পরেও হবে। লোকগুলো যে ফিরেছে সেটাই সবথেকে বড় প্রাপ্তি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement