Kerala flood

কুরবানির মাংসের খুশবু আসবে না হেঁশেল থেকে

এ বারের ইদ শুধুই বিষাদের আর অপেক্ষার। টেলিফোনে তাঁরা খবর পেয়েছেন, ঘরের লোক বেঁচে আছে, স্বান্ত্বনা বলতে এইটুকুই। কিন্তু তাতে চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর ও শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০২:০৯
Share:

ইদের আগের দিন মসজিদে নেই কোনও আনন্দ-উচ্ছ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।

ভিন রাজ্যের বন্যা তাঁদের ইদের আনন্দকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে!প্রিয়জন রয়ে গিয়েছেন বন্যাবিধ্বস্থ কেরলে। আর নদিয়া জেলার প্রত্যন্ত প্রান্তের গ্রামে উদ্বেগে-আতঙ্কে ইদের দিন কাটাতে চলেছেন তাঁদের স্ত্রী-পুত্র-পরিবার। টানাটানির সংসারে এ বারের ইদে হেঁশেল থেকে ভেসে আসবে না কুরবানির মাংসের সুগন্ধ, নতুন জামাকাপড় উঠবে না ছোটদের পরনে। এ বারের ইদ শুধুই বিষাদের আর অপেক্ষার। টেলিফোনে তাঁরা খবর পেয়েছেন, ঘরের লোক বেঁচে আছে, স্বান্ত্বনা বলতে এইটুকুই। কিন্তু তাতে চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না।দিন কয়েক আগেই কেরল থেকে বাড়িতে ফোন করেছিলেন রবিউল। ন’ বছরের ছোট মেয়ে আবদার করেছিল, “আব্বা, আমার জন্য একটা জামা আনবা। আর একটা হিলতোলা জুতো। কিন্তু কোথায় কী? ধুবুলিয়ার শোনডাঙার রবিউল শেখের বাড়িতে শুধুই বিষাদ। সাত মাস আগে কেরলে কাজ নিয়ে গিয়েছিলেন। ভাল কাজ না-মেলায় টাকা পাঠাতে পারেনি বাড়িতে। ভেবেছিলেন ইদে বাড়ি গিয়ে জমানো টাকা দিয়ে সকলের জন্য জামা কিনবেন, ভাল খাওয়াদাওয়া হবে। তিনি এখন জলবন্দি। তাঁর বাড়ির ভাঁড়ার ফাঁকা। আত্মীয়-পরিজন একটু-একটু করে চালডাল দিয়ে সাহায্য করেছেন। যাতে অন্তত ভাতটুকু রাঁধা যায়। ছোট মেয়েটা বার বার মা’কে জিজ্ঞাসা করছে, ‘‘বিরিয়ানি করবে তো মা?’’ একই অবস্থা নুরজেল মল্লিকের বাড়িতে। তিন মাস আগে তিনিও কেরল গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে। তিনিও আটকে পড়েছেন বন্যায়। স্ত্রী ছায়া বিবির হাতে কিছুই নেই। ইদের বিশেষ খাওয়াদাওয়া দূরে থাক, পরিবারের সকলের মুখে আগামী কয়েক দিন কী তুলে দেবেন ভেবে পাচ্ছেন না ছায়া।জেলা শাসক সুমিত গুপ্ত বলছেন, “আমাদের কাছে ওঁদের আসতে অনুরোধ করেছি। সব রকম ভাবে পাশে থাকব। কোনও পরিবারকে যাতে অভুক্ত থাকতে না- হয় সেটা আমরা দেখব।”শান্তিপুর ব্লকের বাগআঁচড়া পঞ্চায়েতের কুতুবপুর, অজয়পল্লির বহু মানুষ কর্মসূত্রে কেরলে থাকেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাঁরা আটকে পড়েছেন। যেমন কুতুবপুরের সাবির মণ্ডল। বাড়িতে দুই ছেলে সাদিক আর মামুনকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় কাটাচ্ছেন সেলিমা বিবি। বাড়ির চৌকাঠে ঠায় দাঁড়িয়ে সেলিমা বলে যান, “স্বামীর কথা হয়েছে কয়েক বার। খাবার পাচ্ছে না। আধপেটা খেয়ে আছে। আমরা এখানে ভালমন্দ মুখে দেব কী করে? এখন একটাই প্রার্থনা, যেন মানুষটা সুস্থভাবে বাড়ি ফেরে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন