Khuti puja

হয়নি খুঁটিপুজো, উৎসবে ভাটার টান?

খুঁটিপুজোর শুরুটা অবশ্যই কলকাতায়। ‘হেভিওয়েট’ পুজোর উদ্যোক্তারা পুজোর মাস তিন চার আগেই একটা শুভদিন দেখে দুর্গাপুজোর আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘোষণা করতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২০ ০৩:৪৫
Share:

নমো নমো করে সারা হল কাঠামো পুজো। নবদ্বীপে। নিজস্ব চিত্র

রথ বা উল্টোরথের দিন প্রতিমার কাঠামো বা পাটপুজো করার রেওয়াজ বেশির ভাগ বনেদিবাড়ির পুজোয় বহুকালের। পারিবারিক পুজোর সেই নান্দীমুখ হালে চাল বদলে হয়েছে ‘খুঁটি পুজো’। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে রীতিমতো নড়বড়ে উৎসবের খুঁটি।

Advertisement

খুঁটিপুজোর শুরুটা অবশ্যই কলকাতায়। ‘হেভিওয়েট’ পুজোর উদ্যোক্তারা পুজোর মাস তিন চার আগেই একটা শুভদিন দেখে দুর্গাপুজোর আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘোষণা করতেন। পুরোহিত এসে মন্ত্র পড়তেন। প্রকাশ হতো থিম ভাবনা। মিষ্টিমুখে বাড়ি ফিরতেন এলাকাবাসী। পরবর্তী সময়ে কলকাতার দেখাদেখি তামাম বঙ্গদেশে খুঁটিপুজোর প্রচলন হয়ে গেল। বিশেষ করে জেলার বড় বাজেটের পুজোর শুরু হয়ে যেত ওই খুঁটিপুজো দিয়েই। কাশ, শিউলি ফোটার অনেক আগেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে যেত। বাদকুল্লা থেকে বাবলারি, চাকদহ থেকে চরমাজদিয়া। বেশির ভাগ ভাগ জায়গায় পুজো উদ্যোক্তারা বেছে নিতেন রথযাত্রার দিনটি। কারও আবার পছন্দ ছিল উল্টোরথ।

কিন্তু এ বারে সে সব আয়োজন বন্ধ। করোনার কারণে লকডাউন ও আনলকের টানাপোড়েনে শিকেয় উঠেছে দুর্গাপুজোর আয়োজন। বনেদি বাড়ির পুজোর আয়োজন তবু কোনও রকমে হলেও বারোয়ারি দুর্গাপুজো নিয়ে তেমন কিছুই চোখে পড়েনি এ দিন। নবদ্বীপে ছোটবড় মিলিয়ে গোটা পঞ্চাশে দুর্গাপুজো হয়। বেশির ভাগ পুজো কমিটি জানিয়েছেন পুজো হয়তো হবে কিন্তু কী ভাবে তা নিয়ে এখনই ভাবার সময় আসেনি।

Advertisement

নবদ্বীপ আজাদ হিন্দ ক্লাবের গত বারের পুজোর বাজেট ছিল পনেরো লক্ষ টাকা। তাদের দুর্গাপুজোর সূচনা হয় ওই রথের দিনেই। পুরোহিত এসে শালগ্রাম ছুঁইয়ে কাঠামো পুজো করার পর প্রতিমা শিল্পী এসে আনুষ্ঠানিক সূচনা করে যান প্রতিমা নির্মাণের। উপচে পড়ত ভিড়। ঢাকের শব্দে রানিরচরা অঞ্চল বুঝতে পারে পুজো আসছে। এ দিনেই মণ্ডপ, প্রতিমা, আলোক শিল্পীদের অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু এ বার নমো নমো করে কাঠামো পুজোটুকুই হয়েছে। ক্লাবের তরফে শুভাশিস কংসবণিক জানান, “অন্য বার খুঁটিপুজোর মধ্যে দিয়ে উৎসবের সুরটা বাঁধা হয়ে যায়। এ বার নিয়মরক্ষা করা হয়েছে।”

শহরের আর এক আকর্ষণীয় পুজো মণিপুর দুর্গাপুজো কমিটিও প্রতিবার রথের দিনেই তাদের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করে। থিমের জন্য বিখ্যাত ওই পুজোর থিম প্রকাশ হত ওই দিনে। বৈশাখ থেকে কাজ করে রথের দিন পুরো বিষয়টি এলাকার মানুষকে জানানো এবং তাঁদের মতামত নেওয়া হতো রথের দিনে খুঁটিপুজো করে। সম্পাদক মানস সাহা বলেন, “এখনও পুজো নিয়ে ভাবা মতো অবস্থা আসেনি। তাই খুঁটিপুজো দূরে থাক পুজো কা ভাবে সেটা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়নি। যে ভাবে পুজোর আয়োজন করি এ বার হয়তো তেমন ভাবে করা যাবে না।”

নবদ্বীপে যোগমায়া মহিলা সমিতির খুঁটিপুজো প্রতি বছর রথের দিনে হলেও এ বারে হয়নি। একাধিক ছোট বাজেটের পুজোর উদ্যোক্তারা পুজো আদৌ হবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান। লকডাউনে দীর্ঘ কর্মহীনতার পর পুজোর জন্য কার কাছে হাত পাতবেন ভেবেই পাচ্ছেন না কেউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন