সপ্তশৃঙ্গে পা রাখলেন ‘ভাইয়া’

কলকাতার ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা সত্যরূপ গত ৩০ নভেম্বর বাড়ি থেকে রওনা দেন। গায়ত্রীদেবী জানিয়েছেন, আবহাওয়া খারাপ থাকায় একসময়ে ওর গতিবিধি জানা যাচ্ছিল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৭
Share:

জয়ের উচ্ছ্বাস। নিজস্ব চিত্র

আন্টার্কটিকার ৪৮৯২ মিটার উঁচু ভিনসন ম্যাসিফ ছুঁতেই ‘সপ্তশৃঙ্গ’ জয়ের কৃতিত্বের অধিকারী হলেন মুর্শিদাবাদের সত্যরূপ সিদ্ধান্ত।

Advertisement

এর আগে সামরিক বাঙালি হিসেবে প্রথম সপ্তশৃঙ্গ জয় করেন নৌসেনার সত্যব্রত দাম৷ সত্যরূপ সিদ্ধান্ত প্রথম অসামরিক বাঙালি হিসেবে ওই কৃতিত্ব অর্জন করায় খুশির হাওয়া মুর্শিদাবাদে। সত্যরূপের মা গায়ত্রী বলেন, ‘‘শনিবার সকাল সাড়ে ৫টায় শৃঙ্গ ছোঁয় ভাইয়া (সত্যরূপের ডাক নাম)। শনিবার সকাল ৯টায় স্যাটেলাইট কমিউনিকেটরের মাধ্যমে ভাইয়া বাড়িতে ফোন করে বিষয়টি জানায়। কিন্তু তার আগে শুক্রবার রাত জেগে ওই জিপিএস স্যাটেলাইট কমিউকেটরের সঙ্গে ডেলোর-মে লিঙ্ক করে ওর গতিবিধি লক্ষ্য করেছি। বেস ক্যাম্প থেকে রওনা দিয়ে কত নম্বর ক্যাম্পে রয়েছে, কোন ক্যাম্পে বিশ্রাম নিচ্ছে এবং শৃঙ্গ ছুঁতে কত মিটার বাকি রয়েছে সবটাই জানতে পারছিলাম। কিন্তু শৃঙ্গ না ছোঁয়া পর্যন্ত টেনশনে ছিলাম। কারণ সেখানে এখন ভীষণ আবহাওয়া খারাপ চলছে।’ শেষ পর্যন্ত স্যাটেলাইট কমিউকেটর থেকে বুঝতে পারি শনিবার সকাল সাড়ে পাঁচটায় ও শৃঙ্গ ছুঁয়েছে। পরে ফোন করে শৃঙ্গ ছোঁয়ার কথা জানানোর পাশাপাশি শরীর ভাল থাকার কথা জানায় সে।’’

কলকাতার ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা সত্যরূপ গত ৩০ নভেম্বর বাড়ি থেকে রওনা দেন। গায়ত্রীদেবী জানিয়েছেন, আবহাওয়া খারাপ থাকায় একসময়ে ওর গতিবিধি জানা যাচ্ছিল না। তখন পরিবারের সকলেই চিন্তিত হয়ে পড়ে। কারণ এখন সেখানে মাইনাস ৪০-৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রা এবং তার আগে সত্যরূপ মেসেজ করে জানায় যে, ৯০-১০০ কিমি বেগে ঝড় বইছে। রাশিয়ান অভিযাত্রীদের তিনটে তাঁবু উড়ে যায়। ওরা তাঁবুর চার পাশে বরফ কেটে দেওয়াল তুলে দেওয়ায় কোনও রকমে বেঁচে যায়। তা-ও ঝড়ে ওদের তাঁবু ভেঙে যায়। তবে এই অভিযানে সত্যরূপের খরচ প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা। তার মধ্যে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছে ৩৫ লক্ষ টাকা এবং স্পনসরশিপ থেকে পেয়েছে প্রায় ২৫ লক্ষ। কিন্তু ১০ লক্ষ টাকা কম পড়ে। তখন ফেসবুকে বন্ধুদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্যের জন্য আবেদন করা হয়। তাতে চেনা-অচেনা অসংখ্য মানুষ সাহায্য করেন।

Advertisement

‘সপ্তশৃঙ্গ’ বলতে ধরা হয় এশিয়ার এভারেস্ট, দক্ষিণ আমেরিকার আকোঙ্কাগুয়া, উত্তর আমেরিকায় ডেনালি, আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো, ইউরোপের এলব্রুস, আন্টার্কটিকার ভিনসন ম্যাসিফ, অস্ট্রেলিয়ার কার্সটেঞ্জ পিরামিড, সীমানা ও প্লেটগত কারণে ওশিয়ানিয়ার কসকিউস্কো ও ইউরোপের মঁ ব্লাঁকেও অনেকে ‘সপ্তশৃঙ্গ’-এর সম্মান দেন৷ এত দিন সত্যরূপের দখলে ছিল না ভিনসন ম্যাসিফ৷ শনিবার তা পূরণ করে ফেললেন তিনি৷ সঙ্গে থাকা জিপিএস যন্ত্রের মাধ্যমে দুনিয়াকে সত্যরূপ বলেছেন— ‘‘দ্য সেভেন সামিটস! হাই ক্যাম্পে ফিরে এসেছি৷ সকলের প্রার্থনার জন্য ধন্যবাদ৷’’

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থানকে স্বাগত বামেদের

সত্যরূপ সিদ্ধান্তের দলে রয়েছেন ছ’জন। তার মধ্যে নিউজিল্যান্ডের তিন জন ও অস্ট্রেলিয়ার দুজন। তবে এর পরে আগামী ১৯-২০ ডিসেম্বর আবহাওয়া অনুকূল থাকলে সাউথ পোল এবং সেখান থেকে ফিরে আসার পরে আরও চারটি শৃঙ্গ জয়ের পথে হাঁটবে সত্যরূপ। তার মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকার ভলক্যানো রয়েছে।

এ দিকে সুখবর পাওয়ার পর সত্যরূপের ফেসবুক পেজ অভিনন্দনে ভরে গিয়েছে৷ দেশ তো বটেই, বিদেশ থেকেও আসছে শুভেচ্ছার বার্তা৷ কলকাতার পর্বতপ্রেমী মহলও খুশি সত্যরূপের কৃতিত্বে৷ খুশি বহরমপুরও৷ তাঁকে সংবর্ধনার জন্য প্রস্তুতি চলছে সেখানে৷ তাঁর এক ছেলেবেলার বন্ধু পিকলু মজুমদার বলেন, ‘‘সংবর্ধনা ও শোভাযাত্রার জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন