এক পশলা বৃষ্টিতে হাবুডুবু কৃষ্ণনগর

প্রাক-বর্ষার ঘণ্টা খানেকের বৃষ্টিতেই শহরের সিংহভাগ অংশেই হাঁটু সমান জল। সেই জল নামতে সময় লাগছে আরও ঘণ্টা খানেক সময় লেগে যাচ্ছে। এক ঝলক দেখলে যেন কৃষ্ণনগরকে অবিকল বানভাসি বলে মনে হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৬ ০৭:৫০
Share:

জল ঠেলে যাতায়াত। কৃষ্ণনগর হাই স্ট্রিটে সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

প্রাক-বর্ষার ঘণ্টা খানেকের বৃষ্টিতেই শহরের সিংহভাগ অংশেই হাঁটু সমান জল। সেই জল নামতে সময় লাগছে আরও ঘণ্টা খানেক সময় লেগে যাচ্ছে। এক ঝলক দেখলে যেন কৃষ্ণনগরকে অবিকল বানভাসি বলে মনে হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরেও দেখা গেল অল্প বৃষ্টিতেই শহরের প্রাণকেন্দ্র— পোস্ট অফিসের মোড়ে হাঁটু সমান জল। বৃষ্টি থামলেও জল অত সহজে নামছে না। লোকজনকে ওই জল মাড়িয়েই চলাচল করতে হয়। শহরের প্রাণকেন্দ্রেই যদি নিকাশির এই দশা হয়, তাহলে অন্যত্র কী হবে তা সহজেই অনুমেয়। এ ভাবেই বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে পথচারিদের হয়রানির বহর।

Advertisement

শহরের পল্লিশ্রী, বৌবাজার, অরবিন্দ রোড, কালীচরণ লাহিড়ি লেন, চাষাপাড়ার একাংশ জলের তলায় চলে যায়। শহরের বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এখনই এই দশা হলে বর্ষা পুরোপুরি শুরু হলে তখন কী অবস্থা হবে। হাই স্ট্রিটের কিছু দোকানেও জল ঢুকে যায়। মঙ্গলাপাড়া, অরবিন্দ রোড, পল্লিশ্রী এলাকার বেশ কিছু বাড়ির উঠোনে জল জমে যায়।

শতাব্দী প্রাচীন কৃষ্ণনগর শহরের নকশায় এমনিতেই পরিকল্পনার অভাব প্রকট। শহরে নিকাশি-নালা পরিমানও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তার উপর রয়েছে নিকাশিনালা বুজে যাওয়ার সমস্যা। গৃহস্থলী ও দোকানের নোংরা-আবর্জনা জমা হচ্ছে নালায়। ফলে শহরের সিংহভাগ নালাই প্লাস্টিকে ভর্তি। তাছাড়া শহরের নিকাশির সব থেকে বড় মাধ্যম অঞ্জনা খালই বুজে গিয়েছে। খালের অনেকাংশই চলে গিয়ে দখলদারদের হাতে। খালের ইতিউতি তৈরি হয়েছে। শহরের ছোট ছোট নালার জল এসে পড়ে অঞ্জনা খালে। কিন্তু সেই খালই বুজে যাওয়ায় জল যাওয়ার কোনও উপায় নেই। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই শহর এ ভাবে জলমগ্ন হচ্ছে বলে শহরের বাসিন্দাদের একাংশের মত। অঞ্জনা খাল তো অনেক জায়গায় ভ্যাটে পরিণত হয়েছে। সে‌খানে নোংরা জমে জমে উঁচু ঢিবি তৈরি হয়েছে। সেদিকে কারও খেয়াল নেই। ফলে বৃষ্টির অতিরিক্ত জল নামার মাধ্যমটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া শহরের সব অংশে নিকাশি নালা নেই। অথচ ২০০০ সালে বন্যার সময় এই অঞ্জনা খালের মাধ্যমেই শহরের জল বার হয়েছিল। অভিযোগ, সেই খালকে আগের দশায় ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের বড়ই অনীহা। যার ফল ভুগতে হচ্ছে নাগরিকদের। সামান্য বৃষ্টিতেই ঘর-বন্দি হয়ে কাটাচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

শক্তিনগরের এক বাসিন্দা জানালেন, প্রতিদিন বাড়িতে অব্যবহৃত প্লাস্টিক ও উচ্ছিষ্ট ফেলা হয় নালায়। তাছাড়া শহরের বড় বড় বাজারের দোকানদাররাও চায়ের ভাড়, প্লাস্টিক-সহ পচা আলু-পটল কালো প্যাকেট-বন্দি করে ফেলেন নালাতে। শহরের আর এক বাসিন্দা আনন্দ বিশ্বাসের কথায়, “সাধারণ মানুষ নোংরা-আবর্জনা নির্দিষ্ট জায়গায় না ফেলে নালায় ফেলছেন। এমনকী প্লাস্টিকও নিকাশিনালায় ফেলছে। যার ফলে শহরের নিকাশিনালায় মুখ বন্ধ হয়ে জল উপচে রাস্তায় আসছে। এবিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তেমনি শহরের নিকাশিনালাগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না।’

কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের অসীমকুমার সাহা বলেন, “শহরবাসী প্লাস্টিকের ব্যবহার না ছাড়লে নিকাশি সমস্যার পুরোপুরি সমাধান সম্ভব নয়। প্লাস্টিক বর্জন নিয়ে একাধিকবার নাগরিকদের সচেতন করা হয়েছে। ২৩ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত প্লাস্টিক বর্জন এবং নিকাশিনালায় নোংরা আবর্জনা ফেলার বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পুরসভার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পাড়ায় পাড়ায় আলোচনাচক্রেরও আয়োজন করা হবে।’’ তবে অসীমবাবুর দাবি, জল কিন্তু বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে না। ঘণ্টা খানেকের মঝ্যেই জমা জল নেমে যায়। এলাকা আবার আগের মতো হয়ে যায়। যদিও শহরের বাসিন্দারা দীর্ঘস্থায়ী ভোগান্তির কথা জানাচ্ছেন। অভিযোগ, নিকাশির মুখ বন্ধ থাকায় জল বেরোতে দেরি হচ্ছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, হাইস্ট্রিট এলাকায় নতুন নিকাশির কাজ চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement