মেলেনি পণ, তরুণীর মুখে ঢালা হল বিষ

মোটা অঙ্কের নগদ টাকার সঙ্গে দিতে হয়েছিল সোনার গয়না ও আসবাবপত্র। অভিযোগ, তার পরেও মন ভেজেনি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের। বিয়ের পর থেকেই স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন চেয়ে বসেছিলেন আরও পণ। কিন্তু সেই চাহিদা মেটাতে পারেননি রেবিনা বিবির (২২) বাবা।

Advertisement

কৌশিক সাহা

কান্দি শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৯
Share:

আর পাঁচটা দেনাপাওনার বিয়েতে যেমন হয়!

Advertisement

মোটা অঙ্কের নগদ টাকার সঙ্গে দিতে হয়েছিল সোনার গয়না ও আসবাবপত্র। অভিযোগ, তার পরেও মন ভেজেনি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের। বিয়ের পর থেকেই স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন চেয়ে বসেছিলেন আরও পণ। কিন্তু সেই চাহিদা মেটাতে পারেননি রেবিনা বিবির (২২) বাবা।

নিট ফল, পণের জন্য অত্যাচারে মৃতের সংখ্যা আরও একটি বাড়ল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বড়ঞার বদুয়া গ্রামে রেবিনার শ্বশুরবাড়িতে বেশ অশান্তি চলছিল। আচমকাই সব থেমে যায়। শুধু কানে আসে শিশুর কান্না। পড়শিরা গিয়ে দেখেন, বাড়িতে কেউ নেই। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মাটিতে পড়ে রয়েছেন রেবিনা। পাশে বসে কাঁদছে রেবিনার দেড় বছরের শিশুসন্তান।

Advertisement

পড়শিরা তাঁকে নিয়ে যান কান্দি মহকুমা হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানিয়ে দেন। ওই রাতেই বড়ঞা থানায় রেবিনার স্বামী, শাশুড়ি ও পিসি শাশুড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন রেবিনার বাবা মির কুদরত আলি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই তিন জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়েছে। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

রেবিনার বাবার অভিযোগ, ‘‘জামাইকে বিয়েতে নগদ টাকা ছাড়া ভালই জিনিসপত্র দিয়েছিলাম। তার পরেও চাহিদা মেটেনি। মাঝেমধ্যেই আরও টাকা ও গয়না চাইত। না পেলেই মেয়ের উপরে চলত অত্যাচার। আমি তো গরিব মানুষ। এত টাকা কোথায় পাব?’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘সেই পণ না দিতে পারায় মেয়েকে মারধর করে, মুখে কীটনাশক ঢেলে, শ্বাসরোধ করে খুন করেছে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন।’’

রেবিনার উপরে যে অত্যাচার চলত, তা কবুল করছেন পড়শিরাও। তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, রেবিনা বাবার বাড়ি থেকে টাকাপয়সা আনতে না পারলেই তাঁকে মারধর করে ফের বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হতো। ঘটনার দিন যাঁরা রেবিনাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা জানাচ্ছেন, রেবিনার সারা গায়ে কালশিটে পড়েছিল।

২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর বড়ঞার অ্যাকোম্বা গ্রামের রেবিনার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বদুয়ার রাজেশের। রাজেশের মতোই দিনমজুর রেবিনার বাবা মির কুদরত আলিও। তাঁর কথায়, ‘‘জামাই সব জেনেই তো বিয়ে করেছিল। আমরাও সাধ্য মতো পণ দিয়েছিলাম। তার পরেও মেয়েটাকে ওরা মেরে ফেলল গো।’’

পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি রাজেশ মদের নেশা শুরু করেছিল। ফলে অভাবের সংসারে আরও টানাটানি শুরু হয়। সেই চাপ এসে পড়ে রেবিনার উপরে। প্রতিবেশী মালেক শেখ বলেন, “রেবিনা নিজে বিষ খেয়েছে বলে বিশ্বাস হয় না। মেয়েটা খুব ভাল ছিল। কিন্তু ওর উপরে যা অত্যাচার চলত তা কল্পনা করা যায় না। বহু বার ও বাড়িতে গিয়ে নিষেধ করেছি। কিন্তু কথা শোনেনি কেউ।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, “পণের কারণেই ওই তরুণীকে খুন করা হয়েছে বলেই প্রাথমিক ভাবে আমরা জানতে পেরেছি। শীঘ্রই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন