ভোটার কার্ড জাল, দিব্যি বিক্রি জমি

বাংলাদেশ সীমান্তের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় অনায়াসে জাল ভোটার কার্ড বানিয়ে জমি মাফিয়ারা জমি বিক্রি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই ভোটার কার্ডও আবার হয়েছে বাংলাদেশি নাগরিকের নামে যিনি দেশভাগের পর কোনও দিন ভারতে আসেননি!

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪৪
Share:

বাংলাদেশ সীমান্তের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় অনায়াসে জাল ভোটার কার্ড বানিয়ে জমি মাফিয়ারা জমি বিক্রি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই ভোটার কার্ডও আবার হয়েছে বাংলাদেশি নাগরিকের নামে যিনি দেশভাগের পর কোনও দিন ভারতে আসেননি!

Advertisement

সম্প্রতি এই মর্মে অভিযোগ জমা পড়েছে নদিয়ার জেলাশাসক ও কোতয়ালি থানায়। অভিযোগকারীরা চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। প্রশাসনিক কর্তারাও জেলায় জমি মাফিয়াদের এই দাপটে অস্বস্তিতে। অতীতেও এখানে একই রকম ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু তাতেও অবস্থা শোধরায়নি। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলছেন, “বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আমরা সমস্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখছি। অভিযোগ যদি সত্যি প্রমাণিত হয় তা হলে যারা জড়িত তাদের সকলের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”

দেশের নিরাপত্তার দিক থেকে সীমান্ত এলাকা এমনিতেই অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনের কর্তারাই স্বীকার করছেন, বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। কারণ, এক জন বাংলাদেশির জাল ভোটার কার্ড তৈরি করে যদি তার মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়া যায় তা হলে ধরেই নেওয়া যায় এক জন সন্ত্রাসবাদীরও অনায়াসে জাল ভোটার কার্ড তৈরি হতে পারে। এর পিছনে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি দফতরের কর্মীদের একাংশের যোগসাজশও উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রশাসনিক কর্তারা। এডিএসআর কাশীকান্ত সরকার দাবি করেছেন, “যদি তেমন কিছু হয়ে থাকে তা হলে তার দায় আমাদের নয়। তবে আমরা পুলিশকে গোটা বিষয়টি জানাচ্ছি।”

Advertisement

কৃষ্ণনগরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মনি সুবল লেনের বাসিন্দা দুই প্রতিবেশী প্রহ্লাদ দে ও আবেদ আলি শেখ। দু’জনের এক শতক করে মোট দুই শতক জমি ছিল। মাস কয়েক আগে তাঁরা জানতে পারেন, তাঁদের দু’জনের জমি বিক্রি হয়ে গিয়েছে! এমনকি সেই জমি রেজিস্ট্রিও হয়ে গিয়েছে ফকিরপাড়া লেনের বাসিন্দা চুমকি খাতুন নামে। আর রেজিস্ট্রি করেছেন সাহজাহান শেখ।

সাহজাহান হলেন আবেদ আলির নিজের ভাই, যিনি দেশভাগের সময় বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) চলে গিয়েছিলেন। তার পর আর ভারতে আসেননি। পাড়ার লোকেরাও একই কথা জানিয়েছেন। প্রহ্লাদ ও আবেদ আলির দাবি, জমি মাফিয়াদের ধরে জাল ভোটার কার্ড বানিয়েছেন সাহজাহান বা চুমকি। কার্ডে সাহজাহানের ছবি ও নাম থাকলেও ভোটার কার্ড নম্বরটি আবেদ আলির স্ত্রী রিজিয়া শেখের। এবং পুলিশ মনে করছে, সাহজাহানের নামে অন্য কেউ জমি বিক্রির সময় সই করেছেন। অর্থাৎ, খুব সহজে ভারতের নাগরিক হিসাবে এক বাংলাদেশি নাগরিকের কার্ড তৈরি হয়ে গিয়েছে এবং ভারতের জমি বিক্রি হয়ে গিয়েছে!

যিনি জমি কিনেছেন সেই চুমকি খাতুন বলেছেন, “আমরা তো জানি সাহজাহান শেখ আন্দামানে থাকেন। এখন তো দেখছি আমরাই ফেঁসে যাচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন