হোমেও মাকে খুঁজছে ছেলেটা

সোমবার সন্ধ্যা থেকে এ ভাবেই সামলাতে হচ্ছে ভীমপুরের পূর্ব ভাতজাংলা থেকে তুলে আনা বছর চারেকের শিশুটির। কখনও সে ‘মা মা’ বলে কেঁদে উঠছে। আবার কখনও অন্য বাচ্চাদের খেলছে। ওই হোমে এখন এমন শিশু ৪৯টি। তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট এই নতুন আগন্তুক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর ও করিমপুর শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ০১:২৩
Share:

হোম-সঙ্গ: মাকে খুঁজছে শুভজিৎ। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক

সামনে দুধমুড়ির বাটি নিয়ে গুম মেরে বসে ছিল ছেলেটা। মায়ের হাতে ছাড়া কিছুতেই খাব না সে!

Advertisement

অসহায় হোমের কর্মীরা। ভাগ্যিস বছর আটেকের সুরেশ এসে খেলনা গাড়িটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “খেয়ে নে, তা হলে গাড়িটা দেব।”

সোমবার সন্ধ্যা থেকে এ ভাবেই সামলাতে হচ্ছে ভীমপুরের পূর্ব ভাতজাংলা থেকে তুলে আনা বছর চারেকের শিশুটির। কখনও সে ‘মা মা’ বলে কেঁদে উঠছে। আবার কখনও অন্য বাচ্চাদের খেলছে। ওই হোমে এখন এমন শিশু ৪৯টি। তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট এই নতুন আগন্তুক।

Advertisement

মঙ্গলবার হোমে গিয়ে দেখা গেল, ছেলেরা ক্যারম খেলছে। মাঝখানে এক দাদার কোলে বসে শুভজিৎ। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে গাল টিপে আদর করে দিয়ে যায় এক জন। কিন্তু যাকে সে খুঁজছে, সেই মা কই?

তিন মায়ের টানাটানিতেই তো আজ ছেলেটা হোমে। কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে, যাঁকে সে মা বলে খুঁজছে, ভাতজাংলার সেই বিজলি দাসই এক মাত্র কবুল করেছেন যে তিনি শিশুটির গর্ভধারিণী মা নন। বামুনঘাটার ফুলি দাসের থেকে তিনি তাকে ‘দত্তক’ নিয়েছিলেন। সেই ফুলি বার্থ সার্টিফিকেট দেখিয়ে বলেছেন, এ তাঁরই ছেলে। বাঙালঝি গ্রামের ছেলে-হারানো মা সরিফা বিবি আবার দাবি করে বসেছেন, এ তাঁরই খোয়া যাওয়া ছেলে শামিম শেখ।

আসল নাম তার শুভজিৎ হোক বা শামিম, যেই হোন তার গর্ভধারিণী মা, তাতে কী-ই বা যায় আসে? সে তো খুঁজে চলেছে এত দিন মা বলে ডেকে আসা বিজলিকে। সোমবারই কৃষ্ণনগরে জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে নিতে গেলে বিজলির গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে সে। করিমপুরের হোমে পৌঁছে কান্নাকাটির পরে দুধ-বিস্কুট খেতে-খেতে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। সকালে উঠে ভুলেও ছিল খানিক। খাওয়ার সময় হতেই আবার— মায়ের কাছে খাব!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন