টোটো চালাচ্ছে নাবালক। কান্দিতে। নিজস্ব চিত্র
সদ্য গজানো গোঁফ, লিকলিকে হাত-পা জানান দিচ্ছে, নেহাতই কিশোর বয়স। শৈশবের গন্ধ গা থেকে এখনও মুছে যায়নি। সেই বয়সেই কচি চেটোয় শক্ত করে ধরছে টোটোর স্টিয়ারিং। শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে গাঁ-গ়়ঞ্জে সর্বত্র পৌঁছে যাচ্ছে টোটো চালিয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চোখের সামনে অবাধে নাবালকেরা টোটো চালিয়ে যাতায়াত করলেও কোনও হেলদোল নেই পুলিশ প্রশাসনের। কান্দি মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের সামনে, কান্দি থানার সামনেও কিশোরের টোটো চালিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়। কিন্তু কাউকেই কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।
কান্দিতে ঠিক কতগুলো টোটো চলছে তার কোনও হিসেব দিতে পারেনি পুরসভা। তবে অনুমান, সংখ্যাটা প্রায় হাজার দু’য়েক। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই চালাচ্ছে নাবালকেরা। শহরের বাইরেও টোটোয় যাত্রী চাপিয়ে নিয়ে দৌড়োচ্ছে তারা। এমনকী, খুদে পড়ুয়াদের বাড়ি থেকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া এবং স্কুল ছুটির পর বাড়িতে আনা সবটাই করছে ওই নাবালক চালকেরা।
যেমন বছর তেরোর রঞ্জিত মোল্লা জনা আটেক খুদে স্কুল পড়ুয়াকে টোটোয় চাপিয়ে ছুটছিল হলদিয়া-ফরাক্কা বাদশাহ সড়ক ধরে। পাকড়াও করতে সে জানাল, বাবা সকাল থেকে টোটো চালানোর পর বাড়ি গিয়েছে স্নান-খাওয়া করতে। সেই ফাঁকে সে যাচ্ছে স্কুলের পড়ুয়াদের বাড়িতে পৌঁছে। কিন্তু রাস্তায় এত বড় ট্রাক, বাস। অঘটন কিছু যদি ঘটে? তার মুচকি হেসে রঞ্জিত জানায়, “টোটোতে একবার চেপেই দেখুন না। ঠিক বাড়ি পৌঁছে দেব।” টোটো চালক সুরেন বিত্তার বলেন, “পুলিশের চোখের সামনে ছোটোরা টোটো নিয়ে ঘোরাফেরা করলেও পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে।”
কান্দি পুরসভার ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান সান্ত্বনা রায়ও মানছেন সমস্যার কথা। “টোটো চালকদের অনেকেরই বয়স আঠারোর নীছে। প্রশাসনকে মৌখিক ভাবে নাবালকদের টোটো চালানো দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কিছু হয়নি।”
নাবালকদের টোটোগাড়ি চালানো যে আইনবিরুদ্ধ, সে কথা মানছেন কান্দির মহকুমাশাসক অভীককুমার দাস। তিনি বলেন, “নজরে যে পড়েনি এমন নয়। তবে অনেক সময় নাবালক টোটোচালকদের আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে একটাই জবাব আসে, বাবা শারীরিক ভাবে অক্ষম। তাই সংসার চালাতে টোটো চালাচ্ছে।” তিনি বলেন, “তবে বিষয়টা বন্ধ করতে পুলিশ ও পুরসভাকে নিয়ে বৈঠকে বসা হবে।’’
মুর্শিদাবাদ জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক অনন্তকুমার সরকার বলেন, “আঠারো বছরের আগে কোনও ভাবেই টোটো চালানো যাবে না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”