পাচার ছেড়ে পেটের টানেই অন্য মুলুকে

গত পাঁচ বছরে নানা ঘটনায় প্রগাঢ় ছাপ পড়েছে জনজীবনে। কখনও খুশি, কখনও ক্ষোভ, কখনও আশঙ্কা দুলিয়ে দিয়েছে দেশকে। ভোটের মুখে কতটা ফিকে সেই সব ছবি, কতটাই বা রয়ে গিয়েছে পুরনো ক্ষতের মতো? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। 

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

তেহট্ট শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ১০:৩৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

কয়েক গুণ আয়। তা-ও মাত্র কয়েক ঘণ্টায়। চটজলদি রোজগারের আশায় পাচারের পথে নেমেছিল সীমান্তবর্তী এলাকার বেশ কিছু মানুষ। কিন্তু তারাই এখন ঝুঁকছে অন্য পেশার দিকে। কারণ, গত কয়েক বছরে সীমান্তে নজরদারির কড়াকড়িতে পাচারের রমরমা এখন অতীত।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পাচার দীর্ঘ দিনের একটি সমস্যা। বিশেষ করে ভারত থেকে গবাদি পশু কিংবা কাশির সিরাপ, গাঁজার মতো নেশার দ্রব্য সীমান্তের ও’পারে পাঠানো হত। চোরা পথে এই পাচারের কাজ করত দু’দেশের পাচারকারীরা। কখনও কাঁটাতারের বেড়া কেটে, আবার কখনও যেখানে কাঁটাতারের বেড়া নেই, সেখান দিয়ে পাচার চলত। তবে গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি বদলেছে বলে এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি।

বাউশমারি, কাছারিপাড়া, মেঘনা, শিকারপুরের মতো সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, বিএসএফের কড়াকড়ির জন্য পাচার এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ধীরে ধীরে পাচারকারীরাও তাদের পেশা বদলে ফেলেছে। এখন তাদের অনেকেই চাষাবাদ বা ব্যবসা করে। আবার কেউ টাকা রোজগারের জন্য ভিন রাজ্যে কাজ করতে পাড়ি দিয়েছে। পাচার ছেড়ে এখন নিজের সামান্য জমিতে চাষ কাজ করেন, এমন একজন বলেন, ‘‘অবৈধ জেনেও পেটের তাগিদে এক সময় পাচার করেছি। পাচারকে আর পাঁচটা ব্যবসার মতোই মনে করতাম। শুধু আমি নই, এলাকার অনেক মানুষই এক সময় পাচার করে নিজের সংসার চালানোর পাশাপাশি জমি, বাড়ি ঘর কিনেছে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনাও চালিয়েছে।’’ কিন্তু কয়েক বছর যাবৎ সীমান্তে নজরদারি বেড়েছে। ফলে ঝুঁকিও বেড়েছে। ধরা পড়ে জেলও খাটতে হয়েছে অনেককে। ফলে পাচারের প্রতি ধীরে ধীরে আগ্রহ কমেছে।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এক সময় যারা পাচারের মালপত্র বহনের কাজ করে কয়েক ঘণ্টায় এক-আধ হাজার টাকা আয় করত, তাদের বেশিরভাগই এখন কেরলের মতো ভিন রাজ্যে কাজ করছে। স্থানীয়দের বক্তব্য, কাজের অভাবেই মানুষ জেনেশুনে ওই কাজ করত। আট ঘণ্টা দিনমজুরির কাজ করে যেখানে সর্বাধিক একশো-দেড়শো টাকার বেশি রোজগার হত না, সেখানে রাতের অন্ধকারে দুই-তিন ঘণ্টায় কয়েক গুণ বেশি টাকা ঘরে আসত। ফলে এলাকার অনেক মানুষই এক সময় পাচারের কাজে যুক্ত ছিল।

গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘সবাই একটা কাজ চায়। যেখানে পরিশ্রম করে টাকা আয় করতে পারবে। কাজের জায়গা নেই বলেই আজ হাজার হাজার মানুষকে রাজ্য ছেড়ে বাইরে কাজ করতে যেতে হচ্ছে।’’ সীমান্ত এলাকার সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পুলিশ ও বিএসএফ মনে করলেই এই পাচার আগেই বন্ধ করতে পারত। কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের কোনও রাজ্য থেকে ট্রাক ভর্তি হয়ে গবাদি পশু কী করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছয়, সেই প্রশ্নও উঠেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আগে রাতের অন্ধকারে শয়ে-শয়ে গবাদি পশু পাচারের জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় মাঠের ফসল নষ্ট হতে। ক্ষতিগ্রস্ত হতেন অনেক চাষি। এখন সে রকম ঘটনা তেমন একটা ঘটে না।

বিএসএফের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মাঝে মাঝে গাঁজা পাচারের চেষ্টা করা হলেই তা উদ্ধার করেছে বিএসএফ। বছর দুয়েক আগে থেকে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডসের যৌথ চেষ্টায় সীমান্তের পাচার বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।’’ এলাকায় পাচারের ঘটনা কমায় চওড়া হাসি চাষিদের মুখে। কারণ, গবাদি পশু নিয়ে যাওয়ায় এত দিন জমি নষ্ট হচ্ছিল। সীমান্তে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন