রেফার টু নার্সিংহোম

হাল ফিরেছে, লোক জানে না

নার্সিংহোমের কাজকারবার কেমন তা প্রায় কারওরই অজানা নয়। যিনি বাধ্য হয়ে সেখানে যান আর যাঁর পছন্দের ডাক্তার আছেন বলে নিজেই যান, দু’পক্ষই জানেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৭ ০১:১৩
Share:

নার্সিংহোমের কাজকারবার কেমন তা প্রায় কারওরই অজানা নয়। যিনি বাধ্য হয়ে সেখানে যান আর যাঁর পছন্দের ডাক্তার আছেন বলে নিজেই যান, দু’পক্ষই জানেন। চিকিৎসকেরা জানেন, প্রশাসন জানে। নার্সিংহোম মালিকেরাও জানেন।

Advertisement

প্রশ্ন হল, সরকারি হাসপাতালে আস্থা ফেরেনি বলেই কি রোগীর ঢল এখনও নার্সিংহোম-মুখী?

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের সুপার ও সহ-অধ্যক্ষ সুহৃতা পালের দাবি, ‘‘চিকিৎসা পরিষেবায় উন্নতি হয়েছে। বিনামূল্যে চিকিৎলা পেতে সর্বস্তরের রোগীর ভিড় বাড়ছে। শয্যার সংখ্যা বাড়ানো সত্ত্বেও আইসিইউ-তে রোগী ভর্তির চাহিদা রয়েছে। কেউ-কেউ ধৈর্য রাখতে না নার্সিংহোমে যাচ্ছেন।’’

Advertisement

তবে নদিয়া জেলা হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকারের মতে, ‘‘আগে এক শ্রেণির চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীর মানসিকতার বদল দরকার। তা হলে অনেককেই আর নার্সিংহোমে যেতে হবে না।’’ তবে হাসপাতালের পরিকাঠামোর আরও উন্নতি দরকার বলে তিনি মনে করছেন।

চিকিৎসকদের অনেকেই মনে করছেন, মানুষকে সচেতন না করতে পারাতেই নার্সিংহোমের চাকচিক্যে অনেকে আকৃষ্ট
হচ্ছেন। কল্যাণী জেএনএমের ডাক্তার অভীক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যে হাসপাতালই হোক, প্রাথমিক শর্ত হওয়া উচিত চিকিৎসা। আরাম-টারাম পরে। বেসরকারি হাসপাতালের পুরো বিষয়টায় স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন। কী রোগ, কোন চিকিৎসা হবে, খরচ কত, তা নিয়মিত জানাতে হবে।’’

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের অস্থিশল্য চিকিৎসক অমরেন্দ্রলাল রায়ের মতে, ‘‘সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা নিয়ে একটা অজ্ঞতা কাজ করে। কোন ঘরে রোগীকে নিয়ে যাওয়া উচিত, কোথায় ভর্তি করানো হবে—এগুলো না জানায় দালালেরা সুবিধা নেয়। কিছু চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, অ্যাম্বুল্যান্স চালক এবং‌ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের গোপন আঁতাতও দায়ী।’’

কী বলছে নার্সিংহোম?

কৃষ্ণনগরের নার্সিংহোম মালিক বাসুদেব মণ্ডলের মতে, ‘‘কলকাতার অনেক বড় বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠছে, ততটা কিন্তু মফস্সলে পাবেন না। এক শ্রেণির সরকারি চিকিৎসকের প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়ে যাওয়াও নার্সিংহোম-নির্ভরতার জন্য দায়ী।’’

বহরমপুরের নার্সিংহোম মালিক অশেষকুমার মুখোপাধ্যায় আবার বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে ভিড় আর জটিলতায় রোগীরা নাজেহাল হয়ে যান। ডাক্তার-নার্সদের ডাকলেও পাওয়া যায় না। তাই ওঁরা আমাদের কাছে আসেন।

কী বলছেন স্বাস্থ্যকর্তারা?

নদিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়ের দাবি, ‘‘পরিকাঠামো থেকে শুরু করে পরিষেবা, কোনও দিক দিয়েই আমরা পিছিয়ে নেই। শুধু মানসিক সংস্কার কাটিয়ে উঠতে না পেরেই অনেকে এখনও নার্সিংহোমে যান। তবে যদি অভিযোগ আসে যে হাসপাতালের কোনও চিকিৎসক রোগীকে নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়েছেন, কড়া ব্যবস্থা নেব।’’ মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস জানান, গাফিলতির অভিযোগ পেয়ে ইতিমধ্যেই জেলার চারটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে শো-কজ করা হয়েছে।

আপাতত এই পর্যন্তই!

(‌শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন