শিক্ষিকার বদলি রুখতে অনশনে ছাত্রীরা

মাদ্রাসার ছাত্রীদের সঙ্গে মিশে কাজ করছিলেন দশ বছর ধরে। বেলডাঙার প্রত্যন্ত গ্রাম দেবকুন্ড, ১২০০ ছাত্রীর তিনি এক প্রকার নয়নের মনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৯ ০৫:৫১
Share:

স্কুল ছেড়ে যাওয়া চলবে না, দাবি।

মাদ্রাসার ছাত্রীরা জানতে পারে তাদের প্রিয় শিক্ষিকা, স্কুল ছেড়ে অন্যত্র বদলি হয়ে যাচ্ছেন। এটুকুই যথেষ্ট ছিল, ১০ অগষ্ট থেকে তারই প্রতিবাদে রীতিমতো রাস্তায় নেমেছে এসএআরএম গালর্স হাই মাদ্রাসার মেয়েরা।

Advertisement

স্কুলের বারান্দা থেকে দেবকুন্ড গ্রাম— যেখানে পেরেছে দেওয়া হয়েছে পোস্টার। চলেছে মিছিল করে স্কুল পরিক্রমা। তাদের একটাই কথা, ‘‘আপনি কোথাও যাবেন না ম্যাম!’’

প্রধান শিক্ষিকাকে সামনে রেখে হাতে কাগজে লেখা পোস্টার নিয়ে আন্দোলনের সূত্রপাত। আপনি কোথাও যাচ্ছেন না। আমরা আপনাকে ছাড়বো না। ম্যাম আপনি আমাদের। অন্য কারো নয়। এই পোস্টারের আবেদনে কাজ না হওয়ার পরে টোটোয় মাইক বেঁধে গ্রামের রাস্তায় আট কিলোমিটার পদযাত্রা। দাবি, ‘‘ম্যাম আমাদের ছেড়ে কোথাও যাবেন না।’’ গ্রামবাসীদের সেই আন্দোলনে সামিল করতে এই পদযাত্রা। পরে ১৫ অগষ্ট বেলা ১১ টা নাগাদ তাতেও কাজ না হওয়ায় স্কুলের সামনের গেটে অনশনের ঘোষনা করে ছাত্রীরা। এতো চাপ নিতে পারেনি নি বেলডাঙা দেবকুণ্ড এসএআরএম গালর্স হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন। তিন দিনের আন্দোলনে হার মানলেন মাদ্রাসার শিক্ষিকা। বৃহস্পতিবার মাইক হাতে ঘোষনা করলেন, ‘‘তোদের ছেড়ে যাচ্ছি না।’’ ছাত্রীদের বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়লো এলাকা।

Advertisement

মাদ্রাসার ছাত্রীদের সঙ্গে মিশে কাজ করছিলেন দশ বছর ধরে। বেলডাঙার প্রত্যন্ত গ্রাম দেবকুন্ড, ১২০০ ছাত্রীর তিনি এক প্রকার নয়নের মনি। হবেন নাই বা কেন? মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ উত্তীর্ণ ছাত্রী। কেউ কোন দিন ভেবেছে। স্কুলে চলছে নাটক, গান, নৃত্য,কুইজ,বিতর্ক। ছাদে ফুলের বাগান। মাদ্রাসার প্রাঙ্গনে তৈরি হয়েছে স্থায়ী সাংস্কৃতিক মঞ্চ। সেখানে নাবালিকা বন্ধ করতে নাটক চলছে। সেই নাটক দেখছে সেই অভিভাবকরা যারা আগে নিজের সন্তানের নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে দিয়েছেন। দেবকুন্ড গ্রামের মানুষ, ছাত্রী ও তাদের পরিবার তাই প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান। বৃহস্পতিবার মাদ্রাসায় এসে প্রধান শিক্ষিকার ঘরে অবস্থান শুরু করেন। গত ১০ অগষ্ট হাতে পোস্টার নিয়ে শিক্ষিকার বদলি রোখার চেষ্টা করে যে ছাত্রীরা তারা বৃহস্পতিবার সকালে স্বাধীনতা দিবস পালনের পর চোখের জল সামলাতে পারেনি। প্রধান শিক্ষিকাকে ঘিরে ধরে ২০০ ছাত্রী ক্রমান্বয়ে কেঁদে চলছে। ‘‘দিদিমনি আমরা কী দোষ করলাম।’’ আমাদের একেবারে ছেড়ে চলে যাওয়ার ইচ্ছা কেন হল। তার জবাব আপনাকে দিতে হবে। এই কথা শুনে শিক্ষিকাও কেঁদে চলেছেন। তাকে তার সহকারী শিক্ষিকা থেকে পরিচালন সমিতির সদস্যরাও বুঝিয়ে চলেছেন। অবশেষে বরফ গলল।

দেবকুণ্ড এসএআরএম গালর্স মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন বলেন, ‘‘ওদের সোমবার থেকে স্কুলের পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার সকা‌লে ওরা কেউ খেয়ে আসেনি। স্কুলে টিফিনের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ওরা কেঁদে যাচ্ছে। আর কি নিজেকে বেঁদে রাখতে পারি! তাই থেকে গেলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন