explosives

গোপন ফর্মুলা জানে শুধু কিছু কারিগরই

কত রকমের বোমা তৈরি করা যায়, তার ফর্মুলা কিন্তু সকলে জানে না। সকলকে শেখানোও হয় না। কিছু বাছাই করা কারিগর তা জানে। শাগরেদদের শেখায়।

Advertisement

বিমান হাজরা

অরঙ্গাবাদ শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২১ ০৬:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাজি তৈরির সূত্রে বিস্ফোরক কেনাবেচার ঘাঁটিগুলি বাজির কারবারিদের সকলেরই চেনা। বাজি থেকে কী করে ভয়ঙ্কর বোমা তৈরি করতে হয়, কত রকমের বোমা তৈরি করা যায়, তার ফর্মুলা কিন্তু সকলে জানে না। সকলকে শেখানোও হয় না। কিছু বাছাই করা কারিগর তা জানে। শাগরেদদের শেখায়।

Advertisement

কখনও ঝাড়খণ্ড, বিহার, কখনওবা কালিয়াচক থেকে তাই বিস্ফোরক আনা নেওয়ার সমস্যা হয়নি তাদের। এমনকি অরঙ্গাবাদে বিস্ফোরক আনার বিকল্প পথও খুঁজে পেয়েছিল তারা কলকাতা থেকেও।
এক প্রবীণ রবিউল ইসলাম (নাম পরিবর্তিত) বলছেন, “ ৮২ সাল পর্যন্ত অরঙ্গাবাদে লাইসেন্স দেওয়া হত বাজির কারবারিদের। এলাকার দুটি বাজিগ্রামে তখন বসতি বলতে বড়জোর দুশো ঘর। অরঙ্গাবাদের বাজির রমরমা বাজার ছিল তখন রেল লাইন পাড়ের সেই দুই গ্রামে। দু’হাতে পয়সা আয় হত। কেউ বেকার বসে থাকত না গ্রামে। কোন পটকায় কিভাবে ও কতটা মশলা দিতে হবে বাড়ির শিশু, কিশোরদেরও তা ছিল যেন মুখস্ত। তারপর সরকার থেকে বাজি তৈরির লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ হয়ে গেল ৮২ সালের পর থেকে। তারপরেও বাজি তৈরি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। পুলিশকে পয়সা দিয়ে ২০০৯ সাল পর্যন্তও বাজি তৈরি হয়েছে অরঙ্গাবাদে। তবে কিছুটা লুকিয়ে চুরিয়ে। পুলিশ থেকে রাজনীতিক সবাই জানত এই কারবারের কথা।’’ তিনি জানান, খদ্দেরও আসত গ্রামে। উতসব অনুষ্ঠানে তাঁরাও পৌঁছে দিতাম সে বাজি। এভাবেই চলছিল কারবার। তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু এই কারবার চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল পাশের গ্রাম ইমামবাজারের টানা অশান্তিতে।”

লাইন পাড়ের সেই গ্রামে বাজি তৈরির অন্যতম কারিগর ছিলেন প্রয়াত হানিফ সেখ। হানিফের বাজির লাইসেন্স ছিল ১৯৮২ সাল পর্যন্ত। লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়ায় হাইকোর্টে মামলাও করেন হানিফ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে মামলা আর চালাতে পারেন নি তারা।

Advertisement

বছর পঞ্চাশের এক বৃদ্ধা বলছেন, “হানিফই নয়, বাজির লাইসেন্স ছিল সুকুরুদ্দিন, ফুসুরুদ্দিন, সাদাকাশ, রিয়াজুদ্দিন ও হাসেন সেখের। পাশের গ্রামে সে ব্যবসা ছিল জানমহম্মদ, সানমহম্মদ, পাঁচু শেখ, সিদ্দিক শেখ ও আব্বাস শেখের। নদী ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়ে সরকারি খাস জমির উপর এক কাঠা করে জমি দখল করে ঘর বানিয়ে নিয়েছি আমরা। বাজির কাজ করে কোনও অভাব ছিল না গ্রামে। তারপর আর লাইসেন্সও মিলল না। ধীরে ধীরে কমতে শুরু হল বাজির বাজার।”

আর এক প্রবীণ মহিলা বলছেন, “অরঙ্গাবাদের আশপাশের গ্রাম ক্রমশ অশান্ত হতে শুরু করল। কারণে অকারণে শুরু হল যখন তখন বোমাবাজি। আর তার জেরে পুলিশ ধেয়ে আসত বাজির গ্রামে। ধরে নিয়ে যেত বাড়ির পুরুষদের। যেটুকু বাজি তৈরি হত তাও বন্ধ হয়ে গেল ২০১০ সালে সুতি থানার ওসির উপর বোমা হামলার পর। সেই থেকে বাজি তৈরি পুরোপুরি বন্ধ অরঙ্গাবাদের গ্রামগুলিতে। অথচ গ্রামের ছেলে বুড়ো সবাই জানে বাজি তৈরির কাজ।”

আর এই অভিজ্ঞতার জন্যই বাজি তৈরির কাজে মাঝে মধ্যেই ডাক আসত গ্রামের কিশোর ও যুবকদের। মোটা টাকার প্রলোভন দিয়ে তাদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হত কখনও মেদিনীপুরে, কখনও কালনা, পান্ডুয়া, পিংলা, মেমারিতে- বলছেন গ্রামের লোকেরাই।

গ্রামেরই এক যুবক বলছেন, “রাজমিস্ত্রির কাজে যাওয়ার নামে গ্রাম ছাড়ত তারা। কিন্তু আদপে তারা যেত কোনও না কোনও বাজির কারখানায়। রাজমিস্ত্রির শ্রমিকের কাজে কত টাকা আর পাবে ? এখানে বাজি তৈরি বন্ধের পর কয়েক বছর ধরে এভাবেই বাজির কাজে গিয়েছে গ্রামের কিশোরেরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন