‘তুমি দালালি করবে? হোয়াই?’, মমতার আক্রমণ মোদীকে

এক দিকে নরেন্দ্র মোদীর নাম করে তীব্র আক্রমণ, অন্য দিকে জেলার মানুষের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধার মধুবর্ষণ। বৃহস্পতিবারের বারবেলায় নরমে-গরমে কৃষ্ণনগর মাত করে দিয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০০
Share:

বৃহস্পতিবারের বারবেলায় নরমে-গরমে কৃষ্ণনগর মাত করে দিয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

এক দিকে নরেন্দ্র মোদীর নাম করে তীব্র আক্রমণ, অন্য দিকে জেলার মানুষের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধার মধুবর্ষণ। বৃহস্পতিবারের বারবেলায় নরমে-গরমে কৃষ্ণনগর মাত করে দিয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের মাঠে প্রশাসনিক জনসভা করতে এলেও সেটাকেই প্রায় জাতীয় মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু ছাত্রছাত্রী, গরিব চাষি, জেলার মানুষের প্রয়োজনের কথা বলতে গিয়ে তিনি সেই মুখ্যমন্ত্রী। লোকসভা নির্বাচনের আগে এই জনসভায় কেন্দ্রকে আক্রমণ করা যেমন তাঁর লক্ষ্য ছিল, আর এক উদ্দেশ্য ছিল রাজ্য সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরা।

ইতিমধ্যেই কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার জন্য জমি পছন্দ করেছে রাজ্য সরকার। মমতা এ জিন জানান, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলে কোনও টাকা লাগবে না। তাঁর কথায়, “কেন বলুন তো? এখন সরকারি স্কুলে যারা পড়ে তারা সকলেই কন্যাশ্রী। ১৮ বছর পর সকলে ২৫ হাজার টাকা করে পাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা নিয়ে পড়লে দু’হাজার টাকা আর বিজ্ঞান নিয়ে পড়লে আড়াই হাজার টাকা করে পাবে। কেউ ডাক্তার হবে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার। গর্বের ব্যপার।”

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী এই কথা জানাতেই সভায় উপস্থিত বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রীরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। মমতা এর পরে ছাত্রীদের জন্য একের পর এক প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন।

নরেন্দ্র মোদী, শুনছেন?

উইথড্র
আমি ‘আয়ুষ্মান ভারত’ থেকে ইউথড্র করে নিলাম। এ বার তুমি টাকা দেবে। আমি এক টাকাও দেব না।... ক্ষমতা থাকলে একশো শতাংশ দাও। না হলে নিজের ছবি তুলে নাও।
আয়ুষ্মান কার্ড
চিঠিেত দেখলাম প্রধানমন্ত্রীর নাম দেওয়া। আর লোগোটা দেখবেন যেন পদ্মফুল। আমাদের ঠাকুরের পায়ে দেওয়ার পদ্ম নয়। ধান্দাবাজির, দুর্নীতির, দেশে বিভেদ করার পদ্ম। সরকারি টাকায় পার্টির প্রচার করছে।
স্বাস্থ্যের রাজনীতি
বাংলায় মানুষ বিনা পয়সায় স্বাস্থ্য পরিষেবা পায়। ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িষা এমনকি নেপাল থেকেও মানুষ আসে। কেন প্রধানমন্ত্রী নোংরা রাজনীতি করছেন?
শস্যবিমা
শস্যবিমার ১০০ টাকার মধ্যে রাজ্য দেয় ৮০ টাকা। আর নরেন্দ্র মোদীর ছবি লাগিয়ে বাড়িতে-বাড়িতে চিঠি পাঠাবে! ২০১৮ সালে ৬২৫ কোটি টাকা দিয়েছি, যাতে কৃষকদের টাকা দিতে না হয়। ...আমার যদি দিতে হয় তা হলে ১০০ টাকাই দেব। কারও কাছ থেকে ভিক্ষা নেব না।
টাকা কার?
কেন্দ্র তুমি আমার রাজ্য থেকে ৪০-৫০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছ। ইনকাম ট্যাক্সের টাকা, সেলস ট্যাক্সের টাকা, কাস্টমসের টাকা। সেই টাকা থেকেই একটা তোমরা আমাদের অংশ দাও। তুমি এখন মাছের তেলে মাছ ভাজছ।
কী ভাবেন নিজেকে?
বলেছিল, প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেবে। কালো ধন ফিরিয়ে আনবে। এক টাকাও দিতে পেরেছে? ...নোটবন্দির নামে মানুষের টাকা লুট করেছেন। সিবিআই, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সমস্ত সংস্থার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। ইতিহাস বদলে দিচ্ছেন। নাম বদলে দিচ্ছেন। সব কিছু বদলে দিচ্ছেন। কী ভাবেন নিজেকে? যা ইচ্ছা তা-ই করবেন?
সমান্তরাল সরকার
আপনি সমান্তরাল রাজ্য সরকার চালাচ্ছেন! এ জিনিস কখনও হয়নি।... সমস্ত রাজ্য সরকারকে বলব, নজর রাখুন। শুধু মোদীর প্রচার চলছে। ফেডারাল স্ট্রাকচার ভেঙে দিচ্ছে।
উচ্চবর্ণের সংরক্ষণ
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে ৫০ শতাংশের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না। আর মোদী সরকার সেটা ৬০ শতাংশ করে দিল। এটা সর্বনাশ করল। জেনারেল কাস্টের এমনিতেই কাজের সুযোগ কম। ... এতে দরিদ্র কৃষক, দিনমজুর, শ্রমিকের সন্তানদের কাজের সুযোগ কমে গেল। সংখ্যালঘু গরিবদের বঞ্চিত করল। আদিবাসীদের বঞ্চিত করল।
দালালি কেন?
স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, পঞ্চায়েতের কাজ সব রাজ্য করবে। আর দালালি করবে কে? তুমি, নরেন্দ্র মোদী? কেন? হোয়াই?
কত সিবিআই?
মমতা কিছু বললে সিবিআই পাঠিয়ে দেবেন! কত সিবিআই আর ইডি আছে, দেখতে চাই। আমার মুখ বন্ধ করা যাবে না।

আজ, শুক্রবার বারাসতে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস করার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি জানান, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ক্যাম্পাস থাকবে কৃষ্ণনগরের ছাত্রদের জন্য। সেই সঙ্গেই তিনি একের পর এক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করতে থাকেন। জানান, কৃষ্ণনগরে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে ‘আইটি পার্ক’। কল্যাণীতে আসছে ‘ফ্লিপকার্ট’ সংস্থা, সেখানে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। মায়াপুরে নতুন শহর তৈরির কথাও তিনি ঘোষণা করেছেন।

কালনা থেকে শান্তিপুরে ভাগীরথী নদীর উপর ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন সেতু, কয়েক হাজার টাকা খরচ করে বেশ কিছু ফোর লেন রাস্তা, মসলিন তীর্থ, তাঁত তীর্থ, চারটি নতুন কলেজ, ১০টি আইটিআই কলেজ, ১০০ শতাংশ কিসান ক্রেডিট কার্ড বিলির আশ্বাসও দেন তিনি। কৃষি জমিতে খাজনা মকুব, মিউটেশন চার্জ মকুব, শস্যবিমা, এক একর জমি হলে বছরে দু’বার পাঁচ হাজার টাকা করে কৃষিঋণ এবং ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে কোনও কৃষক মারা গেলে তাঁর পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে চেকের মাধ্যমে ধান বিক্রিতে চাষিদের লাভের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

আক্রমণের মূল লক্ষ্য বিজেপি হলেও সিপিএমকেও ছেড়ে কথা বলেননি মমতা। স্কুলবাসে বোমা মারার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের বাসে বোমা মেরেছে। এই হচ্ছে ওদের রাজনীতি!’’ তবে কংগ্রেসের নামে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন