হাসপাতালে জখম তরুণী। — নিজস্ব চিত্র
অ্যাসিড হামলা চলছেই।
কোনও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে চলছে অ্যাসিড বিক্রিও।
সম্প্রতি অ্যাসিড হামলায় হাঁসখালির এক তরুণীর মৃত্যুর পরে নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করারও চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই!
হাঁসখালির ওই ঘটনার এক মাসের মধ্যেই রবিবার রাতে ফের অ্যাসিড হামলা। মদ্যপ স্বামীর অত্যাচারে শ্বশুরবাড়ি যেতে রাজি ছিলেন না ধানতলার বঙ্কিমনগরের বছর ছাব্বিশের এক তরুণী। স্বামীর অনুনয়, অনুরোধ, হুমকিতেও বরফ গলেনি। অতএব অ্যাসিড।
অভিযোগ, রবিবার রাতে স্ত্রীকে লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছুড়ে চম্পট দেয় ওই তরুণীর স্বামী, উত্তম দাস। গুরুতর জখম ওই তরুণীকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর মুখ ও বাঁ হাতের একটা অংশ পুড়ে গিয়েছে।
নদিয়ার ধানতলার বঙ্কিমনগর এলাকার ওই ঘটনার পরে পুলিশ অ্যাসিডের খালি কাপটি উদ্ধার করেছে। রানাঘাটের এসডিপিও ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “সোমবার রাতে উত্তমকে তাহেরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে কোথা থেকে অ্যাসিড পেয়েছিল এবং ওটা কী অ্যাসিড তা জানার চেষ্টা চলছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেক আগে নদিয়ার তাহেরপুরের বাসিন্দা, পেশায় রংমিস্ত্রি উত্তমের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ওই তরুণীর। কিন্তু স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বছর তিনেক আগে বাবার বাড়ি চলে আসেন তিনি। কিন্তু মাঝেমধ্যেই শ্বশুরবাড়িতে এসে জোর করে স্ত্রীকে নিয়ে যেতে চাইত উত্তম। ওই তরুণী রাজি না হওয়ায় তাঁকে খুনের হুমকিও দিত সে।
ওই তরুণীর মায়ের অভিযোগ, মাস দু’য়েক আগেও একবার মেয়েকে লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছুড়েছিল উত্তম। সে বার সফল হয়নি। কিন্তু রবিবার রাতে আর লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে ওই তরুণী বলছেন, ‘‘ওর সঙ্গে কেন যাব, বলতে পারেন? গেলেই তো সেই মদ খেয়ে বাড়ি ফিরবে। তারপর মারধর। বাবার বাড়ি পালিয়ে এসেও তো রেহাই পেলাম না।’’ পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন রাতে রান্নাঘরে রুটি তৈরি করছিলেন ওই তরুণী। সেই সময় পিছন থেকে কাপ ভর্তি অ্যাসিড ছোড়ে উত্তম। যন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করেন তিনি। তাঁর চিৎকারে বাড়ি ও পাড়ার লোকজন ছুটে আসে। বেগতিক বুঝে উত্তমও সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, প্রশাসনের নজদরদারির পরেও রাজ্য জুড়ে অ্যাসিড হামলা চলছেই। শুধু নদিয়াতেই গত এক মাসে দু’টি অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটল। সম্প্রতি হাঁসখালিতে অ্যাসিড হামলায় মারা গিয়েছে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী। তারপর প্রশাসন গা ঝাড়া দিয়ে ময়দানে নেমেছিল ঠিকই। কিন্তু তাতে যে কাজের কাজ কিছু হয়নি, ধানতলার ঘটনা তার প্রমাণ।
নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তাও বলছেন, ‘‘অ্যাসিড নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে সম্প্রতি আমরা কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছি। লাইসেন্স সংক্রান্ত ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে তেমন সাড়া মিলছে না।’’
নদিয়ার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির যুগ্ম সম্পাদক তারক দাস বলছেন, ‘‘এটা আমাদেরও নজরে এসেছে। এই বিষয় নিয়ে সবাইকে নিয়ে শিগ্গির বৈঠক করব। অ্যাসিড হামলা রুখতে আমরাও সবরকম ভাবে প্রশাসনকে সাহায্য করব।’’
প্রশাশন কিংবা ব্যবসায়ী, শীতঘুম না ভাঙলে অ্যাসিড হামলা রুখে দেওয়া কি আদৌ সম্ভব হবে?
প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।