‘মেরে ফেলল গো। বাঁচাও...বাঁচাও’
প্রাণ ভয়ে চিৎকার করতে করতে প্ল্যাটফর্মের উপর দিয়ে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটছেন এক তরুণী। দা হাতে তাঁকে তাড়া করেছেন বছর ত্রিশের এক যুবক। মঙ্গলবার সকাল দশটা নাগাদ এমন দৃশ্য থেকে প্রথমে থ মেরে গিয়েছিলেন বহিরগাছি প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা। তবে চমক ভাঙতেও দেরি হয়নি। বড় কোনও অঘটন ঘটার আগেই যাত্রীরা ওই যুবককে ধরে ফেলেন। পরে অবশ্য বর্ধমানের বাসিন্দা দেবু মণ্ডল নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
রানাঘাট জিআরপি-র আইসি সুভাষ রায় বলেন, ‘‘ওই তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই দু’জন পূর্ব পরিচিত। এ দিন ছেলেটি ওই তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তাতে রাজি না হওয়ায় এমন কাণ্ড বলেই প্রাথমিক ভাবে আমরা জানতে পেরেছি।’’ ধৃতের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করা হয়েছে। আজ, বুধবার তাঁকে রানাঘাট আদালতে হাজির করানো হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব রেলের শিয়ালদহ বিভাগের রানাঘাট গেদে শাখার বহিরগাছি রেল স্টেশনে আপ ও ডাউন প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন যাত্রীরা। তাঁদের অনেকেই ডাউন প্ল্যাটফর্মে ওই তরুণী ও যুবককে কথা বলতেও দেখেছেন। প্রথমে কারও তেমন কিছু মনে হয়নি। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘দু’জন ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। এমন দৃশ্য তো হামেশাই দেখা যায়। কিন্তু তার পরের ঘটনায় আমরা চমকে গিয়েছিলাম। ছেলেটি আচমকা ব্যাগ থেকে দা বের করে মেয়েটিকে তাড়া করে। এমন দৃশ্য তো সিনেমায় দেখা যায় মশাই। কী সাহস বলুন তো?’’
ছেলেটির আচরণে প্রথমে তাঁকে ধরার সাহস দেখাচ্ছিলেন না কেউই। পরে অবশ্য সাহস করে কয়েকজন এগিয়ে গিয়ে তাকে জাপটে ধরে ফেলে। এগিয়ে আসে রেল পুলিশও। ওই তরুণী ও যুবককে নিয়ে যাওয়া হয় জিআরপি অফিসে। খবর পাঠানো হয় ধানতলা থানাতেও। আর এক প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, ‘‘খুব খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ছেলেটিকে ধরে ফেলায় মেয়েটি তো বেঁচে গেল। কিন্তু ধরার পরে লোকজন রাগে ফুঁসছিল। তড়িঘড়ি পুলিশ না এলে ছেলেটিও মার খেয়ে যেত।’’
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত ওই যুবক দেবু মণ্ডল সম্পর্কে ওই তরুণীর দিদির দেওর। তাঁর বাড়ি কাটোয়ার দায়হাটে। দেবু পেশায় অটো চালক। তরুণীর বাড়ি চাপড়া এলাকায়। তিনি কলা বিভাগের ছাত্রী। বহিরগাছিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করছেন তিনি। দিদির বাড়িতে যাতায়াত থাকার সুবাদে দেবুর সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। পুলিশের কাছে দেবু দাবি করেছেন, ওই তরুণীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু, কিছুদিন থেকে ওই তরুণী তাঁকে এড়িয়ে যাচ্ছিল। সেই কারণেই এ দিন ফোন করে তিনি ওই তরুণীকে প্ল্যাটফর্মে ডেকে পাঠান। সেখানে রাগারাগির পরেই তিনি এমন কাণ্ড করেছেন।
ওই তরুণী অবশ্য সম্পর্কের কথা মানতে চাননি। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, ওই যুবক তাঁর দিদির দেওর। সেই সুবাদেই তিনি দেবুকে চিনতেন মাত্র। পুলিশের অনুমান, এ দিন দেবু পরিকল্পিত ভাবে দা নিয়ে এসেছিল। লোকজন তাঁকে না আটকালে একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলার কথায়, ‘‘মেয়েটিরও সাহস আছে বলতে হবে। আমরা হলে দা হাতে ওই রুদ্রমূর্তি দেখেই সংজ্ঞা হারাতাম।’’