ছবি দেখেও বিশ্বাস নেই, কে ভেঙেছে

দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে এসে কথাটা ছুড়ে দেন এক যুবক—“এখানে ভোটের আগে ঘটনাটা ঘটলে কখনও বিজেপিকে ভোটটা দিতাম না।”

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ০১:২১
Share:

শ্রদ্ধা: কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজে। বুধবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

মোটরবাইকের সিটে সজোরে থাপ্পড় মারেন বছর তিরিশের যুবক। প্রবল উত্তেজিত। বলছেন, “ক্ষমতা থাকলে সিসিটিভি ফুটেজ বের করে দেখা। পরিষ্কার হয়ে যাবে, কারা ভেঙেছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি!” পাশে দাঁড়িয়ে এক যুবক ততোধিক উত্তেজিত হয়ে বলছেন, “ফুটেজের দরকার হবে না। গোটা বাংলা দেখেছে।”

Advertisement

বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা যে খুব সহজে বাঙালি হজম করবে না, তা সব দলের কাছেই পরিষ্কার। কাজেই দিল্লি থেকে কলকাতা— বুধবার দিনভর চলেছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার দায় এড়ানোর খেলা। তৃণমূল ফুটেজ দেখিয়ে দাবি করেছে, অমিত শাহের রোড-শো থেকে বিজেপির গুন্ডারা এই হামলা চালায়। আবার অমিত শাহ থেকে রাহুল সিংহেরা বারবার দাবি করেছেন, তৃণমূলই মূর্তি ভেঙেছে। দুই পক্ষের চাপানউতোরে জনতা ঘেঁটে ঘ।

দুপুরে কৃষ্ণনগরের পোস্ট অফিস মোড়ে আড্ডা চলছিল। দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে এসে কথাটা ছুড়ে দেন এক যুবক—“এখানে ভোটের আগে ঘটনাটা ঘটলে কখনও বিজেপিকে ভোটটা দিতাম না।” এক বিজেপি সমর্থক ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, ‘‘এ সব বলিস না! বিজেপি মূর্তি ভেঙেছে, তার কোনও প্রমাণ আছে?’’

Advertisement

মঙ্গলবার রাত থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ভেসে গিয়েছে নিন্দায়, ঘৃণায়, ক্রোধে যার একটা বড় অংশ বিজেপির বিপক্ষে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত তৃণমূল যতটা ‘মাইলেজ’ নিতে সফল হয়েছে, বিজেপি তা পারেনি। শুধু কৃষ্ণনগর নয়, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল। বসে না থেকে রাস্তায় নেমে পড়েছে সিপিএমও। বিজেপি কিন্তু সারা দিনে পথে নামতে পারেনি। বিদ্যাসাগর মূর্তি ভাঙার নিন্দা করে কোনও কর্মসূচির কথাও বলা হয়নি।

ঘটনাচক্রে, নদিয়ায় যে চারটি লোকসভা কেন্দ্র সম্পূর্ণ বা অংশত পড়ে, তার সব ক’টিতেই ভোট হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের মতে, “বিজেপির মুখটা বাংলার মানুষের কাছে আরও স্পষ্ট হল। ভোটের আগে হলে মানুষ ওদের আরও বেশি করে প্রত্যাখ্যান করত।” বিজেপির উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার অবশ্য দাবি করছেন— “এটা আমাদের দলের সংস্কৃতি নয়। তৃণমূল সঙ্কীর্ণ রাজনীতির স্বার্থে এটা করেছে, ভোটের আগে হলে মানুষ তৃণমূলকে কোনও ভোট দিত না।” হিন্দু জাগরণ মঞ্চের প্রদেশ কমিটির সদস্য রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করছেন, “এটা যে ত়ৃণমূলের কাজ, তা সবাই জানে। মানুষ পুরোপুরি তাদের পাশ থেকে সরে যাবে।”

সিপিএম আবার দুই দলের থেকে ‘নিরাপদ দূরত্ব’ বজায় রেখে দাবি করছে, এটা দুই দলের ‘গটআপ গেম’। দলের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র মতে, “এই ঘটনায় বাংলার মানুষের কাছে দুই দলের চরিত্র পরিষ্কার হয়ে গেল। এরা কোন স্তরে নামতে পারে তা প্রত্যক্ষ করলেন রাজ্যের মানুষ। আমাদের জেলায় ভোটের আগে এই ঘটনা হলে শিক্ষানুরাগী মানুষ কোনও ভাবেই এদের ভোট দিতেন না।”

সত্যিটা কী? দিনভর তা-ই হাতড়ে বেরিয়েছে আমজনতা। টিভিতে চলতে থাকা হামলার ভিডিয়োয় গেরুয়া বাহিনীর দাপাদাপি দেখেও অনেকেরই প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে, এই ভিডিয়ো আসল তো? সত্যিই কি বিদ্যাসাগর কে তা জেনেও তাঁর মূর্তি ভাঙা হল? নাকি খালি জোশেই ভেঙে দেওয়া হল? আর, তৃণমূল কি ধোয়া তুলসীপাতা?

সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমের এই প্রবল প্রতাপের যুগেও পরিষ্কার হল না পুরো ছবিটা। হতে দেওয়া হল না। তদন্তে যদি সত্যটা বেরিয়েও আসে, তত দিনে তো ভোটই মিটে গিয়েছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন