ছেলে ফেরে না, কাঁটাতারে বিঁধে থাকে মায়ের অপেক্ষা

সীমান্তের লিখনে, পাচারে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া ছেলের জন্য অপেক্ষায় দিন গুজরান করছেন এমন মায়ের সংখ্যা কম নয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৯ ০০:৩৭
Share:

ঘরের পথে: শনিবার বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

ইদ-মানেই তাঁর কাছে অপেক্ষার বর্ষপূর্তি! লালগোলার তারকাঁটা দেওয়া সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামের তারানগরের বাসিন্দা রহমত ও আসমত শেখ পিঠোপিঠি দুই ভাই ইদের আগের দিন রাতে ‘আসছি’ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। তার পর থেকেই তাঁরা নিখোঁজ। পরিবারের লোকজন বিএসএফ কর্তা থেকে পুলিশের বড়কর্তাদের কাছে গিয়ে দরবার করেন। কিন্তু দুই ভাইয়ের কোনও সন্ধান মেলেনি। তাও বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল!

Advertisement

সেই থেকেই মা ফুকরন বেওয়া প্রতি বছর ইদের সকালে সেমুই-হালুয়া নিয়ে ‘মা’ ডাক শোনার অপেক্ষায় থাকেন, যদি হারিয়ে যাওয়া দুই ছেলে ফিরে আসে। ফি-বছর পড়শিরা যেখানে উৎসবে মাতেন, সেখানে ওই বৃদ্ধার জীবনে নেই কোনও ইদের আনন্দ। “সেমাই বানাতে হয়, তাই বানানো”, কাঁটাতারের বেড়ার দিকে ঝাপসা চোখে তাকিয়ে জানান সত্তরোর্ধ্ব মা।

সীমান্তের লিখনে, পাচারে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া ছেলের জন্য অপেক্ষায় দিন গুজরান করছেন এমন মায়ের সংখ্যা কম নয়। তাই রঙিন কাগজের চেন দিয়ে গ্রাম সাজলেও ফুকরন বেওয়ার মত সীমান্তের মায়েদের জীবনে ঈদের আনন্দ কবেই নিভে গিয়েছে! তাই সীমান্তের অনেক মায়ের কাছেই ঈদ মানেই ছেলেদের দেখতে না পাওয়া জীবনের আরও একটা বছর চলে যাওয়া!

Advertisement

তবে ইদ এলেই ঘরে ফেরা ডোমকলের চেনা ছবি। অসুস্থ বাবা-মা দিন গুনে চলেছেন ছেলের ফেরার অপেক্ষায়। লাঠিতে ভর করেই রাস্তা আর বাড়ি করছেন দিনভর। কচি কচি মুখ গুলো রাস্তায় গাড়ির শব্দ পেলেই ছুটে যাচ্ছে পথে। স্ত্রী ঘন ঘন ফোন তুলে জিজ্ঞেস করছেন, ‘কখন পৌঁছবে?’

ডোমকলের রায়পুর এলাকার মতিউরের পরিবার শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ভাবেই ছটফট করেছে পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস মতিউরের ফেরার অপেক্ষায়। আর অপেক্ষা করবেই বা না কেন, বাবা মায়ের ওষুধ, সন্তানদের পোশাক, স্ত্রীর জন্য একটা লালপেড়ে শাড়ি, সবটাই হবে সে ঘরে ফিরলে। ফলে ইদের আগে এমন অপেক্ষা খুব স্বাভাবিক।

গত ইদে ‘আব্বু’ বাড়ি আসেনি। পরবের সকালে ভিডিয়ো কল করে কথা বলেছিল নার্গিস ও তার বোন শামিমা। রুজির টানে নার্গিসের আব্বু কেরলে ছিলেন রাজমিস্ত্রির কাজে। এ বার প্রায় ১৫ দিন আগে সাফিউল কেরল থেকে বাড়ি ফিরেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন