তখনও গাছে। নিজস্ব চিত্র
মেঘলা বিকেলে পিটুলি গাছের ডালে উঠে তিনি পা দোলাচ্ছেন!
প্রথমে কেউ তাঁকে দেখতে পায়নি। কিন্তু দেখার পরেই চক্ষু চড়কগাছ!
—‘ও বাবা আনোয়ার, নেমে আয়। যা খাবি তাই খাওয়াব।’
—‘পড়ে গেলে যে আর প্রাণে বাঁচবি না বাপ!’
যাঁকে এত মিনতি করে এত কথা, চাপড়ার ডাঙাপাড়ার বছর চল্লিশের সেই আনোয়ার মিস্ত্রির বিকার নেই।
তিনি হাসছেন। কখনও হো...হো, কখনও হি...হি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সেই পিটুলি গাছকে ঘিরে থিকথিকে ভিড়টা ভয়ে কাঁপছে— একে ভিজে গাছ, তার উপরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। এই বুঝি কিছু ঘটে গেল!
খবর গেল পুলিশ ও দমকলে। তারা আসতেই গাছ থেকে নামা তো দূরের কথা, আনোয়ার আরও উপরের দিকে উঠে যায়। তার কাণ্ডকারখানা দেখে জনাকয়েক অতি উৎসাহী ছেলেপুলে তাঁকে নামিয়ে আনতে গাছে ওঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু ছেলেপুলে দেখে আরও উপরে লিকলিকে ডাল ধরেন আনোয়ার।
পুলিশ ও দমকলকর্মীরা বুঝতে পারেন, এতে বিপদ বাড়বে। ছেলেদের গাছে উঠতে নিষেধ করেন। কিছুক্ষণ তাঁকে একা থাকতে দেওয়ার পর দমকল ও পুলিশ অন্য উপায় খুঁজতে শুরু করে।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, আনোয়ারের মানসিক সমস্যা রয়েছে। তিনি মাঝেমধ্যে নোংরা বস্তা বা ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। পড়শি জানে আলম বলেন, “আপনভোলা লোকটা নিজের মতোই থাকে। সে-ই যে এ দিন এত মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে কে জানত!’’ দমকল বাহিনীর আধিকারিক বিশ্বজিৎ মণ্ডল জানান, তাঁরা সকলের কাছ থেকে জানতে চান আনোয়ার কী খেতে ভালবাসে। ভিড় থেকে অনেকেই জানান, আনোয়ারের গাঁজার প্রতি বেশ দুর্বলতা রয়েছে। প্রথমটাই শুনে একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বজিৎবাবু।
প্রথমে তিনি অবশ্য গাঁজার কথা বলেননি।
—‘এই আনোয়ার মিষ্টি খাবে?’
কোনও উত্তর মেই।
—‘আচ্ছা, গরম লিকার চা?’
থম মেরে থাকে চারপাশ।
‘আচ্ছা বেশ, গাঁজার পুরিয়া দেব। এ বার তো নামবে?’
উপর থেকে উত্তর এল—‘আলবাত! এই এলুম বলে!’
বিশ্বজিৎবাবু শুধু বললেন, ‘‘ওষুধে কাজ দিয়েছে।’’ ভবি ভোলার নয়। গাছ থেকে নেমেই ভিড়ের দিকে হাত বাড়িয়ে আনোয়ার বলেন, ‘‘আজ্ঞে, আমার পাওনাটা?’’