জখম ফ্যান্সি ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
সন্তান হওয়ার পরেই ‘ঘ্যান ঘ্যান’ শুরু করেছিল ওয়ার্ড বয় থেকে আয়া, সকলেই। আব্দার একটাই, ‘বখশিসটা দাও এ বার!’
দু-পাঁচ টাকা নয়, নগদ ছ’শো টাকা গুনে সে যাত্রা খুশি করা হয়েছিল তাদের।
বিপত্তিটা বাধে শুক্রবার সকালে, মাতৃসদন থেরে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে।
আরও দু’শো টাকা দাবি করে বসে আয়ারা। তবে, সদ্য মা হওয়া ফ্যান্সি ঘোষের কাছে টাকা ছিল তেমন। তাঁর অভিযোগ, কোল থেকে প্রায় ছিনিয়ে নিয়েই তাঁর সদ্যোজাত শিশুকে ফেলে দেওয়া হয় মেঝেতে। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় তাঁকেও। আহত মা ও ছেলেকে ভর্তি করানো হয় বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তবে, মেডিক্যাল কলেজের সুপার সুহৃতা পাল বলেন, ‘‘শিশুটির শরীরে আঘাতের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মা ও নবজাতক দু’জনেই ভাল আছেন।’’
প্রসূতির পরিবারের অভিযোগ পেয়ে তা অবশ্য থানায় পাঠিয়ে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এফআইআর হিসাবে গন্য করতেও বলা হয়েছে তা। ফ্যান্সির বাবা সুকুমারবাবু অবশ্য নিজেও বহরমপুর থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেছেন। থানার আইসি শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘‘অর্চনা নামে মাতৃসদনের এক আয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তাঁকে ডেকে পাঠানো হবে।’’
এ দিন সন্ধ্যায় হাসপাতালে শুয়ে ফ্যান্সি বলছেন, ‘‘সন্তান হওয়ার পরেই আমার বাবার কাছে ৬০০ টাকা বকশিস আদায় করেছিল আয়ারা। এ দিন ছুটি হতে বাড়ি ফিরছি, ফের ঘিরে ধরল আয়ারা।’’ তিনি জানান, আয়ারা সবাই বখশিসের ভাগ পায়নি, টাকা দিতে হবে ট্রলি বয়কেও— এমনই দাবি করে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে তারা। ফ্যান্সি বলেন, ‘‘এই সময়ে এক আয়া, সদ্যোজাত শিশুটিকে আমার মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। আমিও পড়ে যাই।’’
হাসপাতাল চত্বরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অন্য রোগীর পরিবারের লোকজন ছুটে আসেন। বাচ্চাটি পড়ে রয়েছে দেখে কান্নার রোল ওঠে। পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠছে দেখে সরে পড়েন আয়ারা।
দেরি না করে ফ্যান্সি এবং শিশুটিকে সঙ্গে সঙ্গেই ভর্তি করানো হয় বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে। তবে, তেমন বড় কোনও আঘাত তাঁদের লাগেনি বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা।