Chupi Chor

চুপির চর থেকে এল পরিযায়ী অতিথিরা

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৩১
Share:

নিদয়ায় উড়ে আসা পাখিরা।

ওরা সরে আসছে চুপিচুপি। পরিযায়ী পাখির দল পূর্বস্থলীর চুপির চর থেকে সরছে নবদ্বীপে।

Advertisement

কয়েক বছর ধরে শীতকালে পরিযায়ী পাখির দল ভিড় জমাচ্ছে নবদ্বীপে উত্তর প্রান্তে ছাড়াগঙ্গার তীরে। সেখানেই শেষ হয়েছে নবদ্বীপ পুর এলাকা। নদীর অপর পারে নিদয়া, ইদ্রাকপুর আর মায়াপুরের একাংশ। এই দুই পাড়ের মাঝে বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে গঙ্গার পরিত্যক্ত খাত। কচুরিপানা আর নলখাগড়ার পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর মাছ। জনসমাগমহীন এই চরের খোঁজ পেয়েছে ভিন্‌দেশি পাখির দল। চেনা জায়গা থেকে অল্প দূরে বাঁক নিয়েছে নদী। সেখানেই গড়েছে নতুন বাসা।

পাখির খোঁজখবর যাঁরা রাখেন, তাঁদের কথায় বছর চারেক যাবৎ এখানে ভিড় জমাচ্ছে শীতকালীন পরিযায়ী পাখির দল। পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে রয়েছে— অসপ্রে, রুডি শেলডাক, স্মল প্রাটিনকোল, রিভার ল্যাপ উইং, গ্রে হেরন, পার্পল হেরন, রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড, গ্রিন বি ইটার। শীত পড়লেই মধ্য ও উত্তর এশিয়া, ইউরোপ, তিব্বত, সাইবেরিয়া থেকে পরিযায়ী পাখিদের কেউ কেউ যেমন আসে, তেমনই আবার এই রাজ্যের উত্তরবঙ্গ থেকেও কয়েক প্রজাতির পাখি চলে আসে তুলনায় উষ্ণ দক্ষিণ বা মধ্য বঙ্গে খাবার এবং প্রজননের প্রয়োজনে।

Advertisement

নবদ্বীপের সামান্য দূরে পূর্বস্থলীর চুপি গ্রামে গঙ্গার ধারে এই সব পাখির আনাগোনা অনেক দিন ধরে। নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরের গোড়া থেকেই এদের আসা শুরু হয়ে যায়। চুপি, কাষ্ঠশালীর গঙ্গার চর ছিল ওই সব পাখির প্রিয় জায়গা। অথচ, পাখি দেখতে ভিড় বাড়তেই ছবিটা বদলে গেল দ্রুত। গড়ে উঠল পাখিরালয়। আদতে উদ্দেশ্য ছিল পক্ষীপ্রেমীদের জন্য একটা জায়গা করে দেওয়া। ওয়াচ টাওয়ার, বসার জায়গা, ছোট ছোট ডিঙি নৌকা— যাতে নিঃশব্দে ছবি তোলা যায়।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চুপির সেই পাখিরালয় উইকএন্ড-এ বেড়ানোর জায়গায় পরিণত হয়েছে। বাগান, পিকনিক, তাঁবুতে রাত্রিবাসের ঢালাও বন্দোবস্ত। ভিড় লেগেই আছে বছরভর। হই-হট্টগোল। যার ফলে কয়েক বছর ধরেই পরিযায়ী পাখিরা মুখ ফিরিয়েছে চুপির চর থেকে। তাদেরই কিছু অংশ খুঁজে নিয়েছে নবদ্বীপের এই নতুন অংশ। চুপি থেকে জলপথে মাত্র আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে আপাতত শীতের অতিথি হয়ে আসছে ওরা।

ওদের নতুন বাসার খবর রাখেন সোমনাথ বিশ্বাস বা বিশ্বরঞ্জন দাসের মতো কিছু মানুষ। ক্যামেরা হাতে নজর রাখছেন ওদের বদলে যাওয়া গতিবিধির উপরে। সোমনাথ বিশ্বাস জানাচ্ছেন নবদ্বীপে পাখির সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। তিনি বলেন, “পরিযায়ী পাখিরা আসেই একটি বিশেষ প্রাকৃতিক পরিবেশ খুঁজতে। চুপির চরে সেই পরিবেশ পরিযায়ীরা আর পাচ্ছে না।”

বিশ্বরঞ্জন দাস পেশায় শিক্ষক। তাঁর কথায়, “শীতের সকালে কুয়াশার ছবি তুলতে গিয়ে আমি পাখির প্রেমে পড়ে যাই। সেটা ছিল ২০১৮ সাল। তারপরের দুটো শীত আমি পাখিদের নিয়েই কাটাচ্ছি। এবারে এ জন্য দু’টো লেন্স ভাড়া করেছি।”

ছবি সৌজন্য: সোমনাথ বিশ্বাস ও বিশ্বরঞ্জন দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন