সকাল সাড়ে ন’টা। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে। রাস্তাঘাট প্রায় সুনসান। এমন বাদলা দিনে রিকশা করে বহরমপুর স্টেশন থেকে নিরুপমাদেবী রোডে বাড়ি ফিরছিলেন স্বপ্না আগরওয়াল। শহরের বারো বিঘা কবরাস্থানের কাছে রিকশা পৌঁছতেই একটি মোটরবাইক সামনে এসে দাঁড়ায়। স্বপ্নার গলায় ও হাতে গয়না দেখিয়ে মোটরবাইক থেকে নেমে বর্ষাতি পরা দুই যুবক নিজেদের পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে বলে, ‘‘কয়েক দিন আগেই এই রাস্তায় এক শিক্ষিকার গয়না ছিনতাই হয়েছে। এর পরেও এ ভাবে প্রকাশ্যে গয়না পরে ঘুরছেন! গয়না খুলে ব্যাগে ভরুন।’’
তাদের কথায় স্বপ্না ইতস্তবোধ করছিলেন। তখন মোটরবাইকে করে আর এক যুবক এসে রিকশার সামনে দাঁড়িয়ে যায়। তার গলাতেও সোনার হার। পুলিশ পরিচয় দেওয়া দুই যুবক তাকেও হার খুলে ব্যাগে রাখার পরামর্শ দেয়। এর পরে স্বপ্না সোনার হার ও হাতের বালা খুলে ব্যাগে ভরতে যাচ্ছিলেন। তখন ওই দুই যুবক একটি কাগজ বের করে গয়না সেখানে রাখতে বলে। এর পরে কাগজে জড়ানো আসল গয়নার পরিবর্তে নকল গয়না ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়ে চম্পট দেয়।
কিছুটা রাস্তা এগোনোর পরে টনক নড়ে স্বপ্নার। তাঁর দাবি, ‘‘কিছুটা এগোতেই আমার সন্দেহ হয়। ব্যাগ খুলে দেখি আমার আসল গয়নার বদলে নকল গয়না ঢুকিয়ে দিয়েছে। পিছু ফিরে দেখি তারা আর কেউ নেই। তখন বুঝতে পারি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা আমার সর্বনাশ করে দিয়েছে।’’ রবিবার ওই ঘটনার পরে তিনি বহরমপুর থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিনব কায়দায় পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে গয়না কেপমারির ঘটনায় বহরমপুর শহরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার জানান, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযু্ক্তদের চিহ্নিত করে শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।’’
স্বপ্নার স্বামী প্রকাশচন্দ্র আগরওয়াল ব্যবসায়ী। তিন মেয়ের পড়াশোনার জন্য বছর সাতেক আগে তাঁরা বহরমপুরের নিরুপমাদেবী রোডে একটি বাড়ি কেনেন। এ দিন সকালে দুই মেয়েকে কলকাতাগামী ট্রেনে তুলে দিয়ে বহরমপুর স্টেশন থেকে রিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন স্বপ্না। বাড়ি ফেরার পথেই ওই ঘটনা।