পুলিশ পরিচয় দিয়ে ঘরে ঢুকে গুলি দাদু-নাতিকে

পুলিশ পরিচয় দিয়ে ঘরে ঢুকে গুলি করে খুন করার চেষ্টা করা হল এক ব্যক্তিকে। গুলিবিদ্ধ হয়েছে তার বছর পাঁচেকের নাতিও। দু’জনই বর্তমানে কলকাতার এসএসকেএম-এ চিকিৎসাধীন। এই ঘটনায় পুলিশ চার জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তির বাড়ি কৃষ্ণগঞ্জের গেদে দাসপাড়া এলাকায়। নাম লক্ষ্মণ দাস। নাতির নাম দেব দাস। লক্ষ্মণ দাসের মেয়ের ঘরের নাতি দেব। একটু বড় হওয়ার পর থেকেই সে দাদু-দিদিমার কাছে থাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গেদে শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৬ ০৩:১০
Share:

চোখে জল সান্ত্বনা দাসের।

পুলিশ পরিচয় দিয়ে ঘরে ঢুকে গুলি করে খুন করার চেষ্টা করা হল এক ব্যক্তিকে। গুলিবিদ্ধ হয়েছে তার বছর পাঁচেকের নাতিও। দু’জনই বর্তমানে কলকাতার এসএসকেএম-এ চিকিৎসাধীন। এই ঘটনায় পুলিশ চার জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।

Advertisement

গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তির বাড়ি কৃষ্ণগঞ্জের গেদে দাসপাড়া এলাকায়। নাম লক্ষ্মণ দাস। নাতির নাম দেব দাস। লক্ষ্মণ দাসের মেয়ের ঘরের নাতি দেব। একটু বড় হওয়ার পর থেকেই সে দাদু-দিদিমার কাছে থাকে। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিরার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ দুষ্কৃতীরা তাঁর বাড়িতে ঢোকে। তত ক্ষণে রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে টিনের বেড়া ও চালের ছোট্ট কুড়ে ঘরের ভিতরে নাতি ও স্ত্রীকে নিয়ে শুয়ে পড়েছিলেন বছর পঁয়তাল্লিশের লক্ষ্মণবাবু। বাইরে কাঠের চৌকির উপরে শুয়েছিলেন তাঁর শাশুড়ি সান্ত্বনা দাস। ছেলে সৌমিত্র ছিল পাশেই মাসির বাড়িতে। অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা এসে নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলে। লক্ষ্মণবাবুর স্ত্রী শেফালিদেবী দরজা খুলতেই তারা ঘরের ভিতরে ঢুকে খুব কাছ থেকে পরপর গুলি করে পালিয়ে যায়।

সান্ত্বনাদেবী বলেন,‘‘ওরা দু’জন ঘরে ঢুকেছিল। প্রথমে বলে যে ওরা নাকি পুলিশ। দরজা খুলতে বলে। পুলিশ শুনে আমার মেয়ে দরজা খুলে দিতেই ওরা ভিতরে ঢুকে গুলি করতে থাকে।’’ তিনি বলেন, ‘‘মুহুর্তের মধ্যে পুরো বিষয়টি ঘটে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা অন্ধকারে পালিয়ে যায়।’’

Advertisement

গুলির শব্দ আর চিৎকার শুনে ছুটে আসেন পড়শিরা। তাঁরা রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানার উপরে দাদু আর নাতিকে পড়ে থাকতে দেখেন। প্রথমে তাদের নিয়ে আসা হয় কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কৃষ্ণনগরের শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই দু’জনকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলকাতার হাসপাতালে। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে তারা বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন।

বৃদ্ধা সান্ত্বনা দাস বলেন, ‘‘মেয়ে জামাই মেলায় গিয়েছিল। শুনেছি সেখানে নাকি আমার মেয়ের গায়ে হাত দিয়েছিল কয়েক জন যুবক। জামাই প্রতিবাদ করে। তাতে এক যুবকের সঙ্গে গন্ডগোল বেঁধে যায়। তার জেরেই এই খুন বলে মনে হচ্ছে।’’

এই ঘটনায় সান্ত্বনাদেবী পাড়ার বাসিন্দা শুভজিৎ হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ শুভজিৎকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ ছাড়াও পুলিশ লক্ষ্মণ দাসের দাদা রাম দাসকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে দুই ভাইয়ের মধ্যে বনিবনা ছিল না। মেলায় গণ্ডগোলের সময় তিনিও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

প্রাথমিক তদ‌ন্তের পরে পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা হয়তো শিশুটিকে গুলি করতে চায়নি। কিন্তু দাদুর পাশে শুয়ে থাকায় লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তার গায়েও গুলি লেগে যায়। কিন্তু লক্ষ্মণবাবুকেই বা কেন খুন করতে আসবে দুষ্কৃতীরা? পুলিশ জানিয়েছে, দিন চারেক আগে গেদে দাস পাড়ার পাশে হারিশনগরে বাউল মেলা হচ্ছি‌ল। স্ত্রীকে নিয়ে মেলায় গিয়েছিলেন লক্ষ্মণবাবু। অভিযোগ, সেই সময় ভিড়ের ভিতরে স্থানীয় এক যুবক তাঁর স্ত্রীর গায়ে হাত দিলে তিনি প্রতিবাদ করেন। তা থেকে উভয়ের মধ্যে অশান্তি বাঁধে। শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল। লক্ষ্মণবাবু তাঁর হাতের টর্চ লাইট দিয়ে গেদে হালদার পাড়ার এক যুবকের মাথায় মারে। সেই সময় ওই যুবক লক্ষ্মণবাবুকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। তদন্তকারীদের অনুমান, সেই রাগের বসেই সে শেষ‌পর্যন্ত গুলি করে খুন করতে চেয়েছে লক্ষ্মণ দাসকে।

অন্য একটি আশঙ্কাও করছে পুলিশ। তারা জানতে পেরেছে, লক্ষ্মণ দাস মদ বিক্রি করেন। নিজেও প্রচুর মদ খান। বাড়ির কাছেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। চোরাচালানকারীরাও তাঁর ঠেকে মদ খেতে আসত। সেই ঠেকের কোনও গন্ডগোলের জন্যই এই খুন নয় তো? সেই সম্ভাবনা কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছেন না তদন্তকারী অফিসাররা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন