অবাধে বোমা ছুড়ে হেঁটে এলাকা ছাড়ল দুষ্কৃতীরা

প্রকাশ্য দিবালোকে বোমাবাজি ও গুলি চালানোর ঘটনা ঘটল শান্তিপুরে। সোমবার বিকেলে আগমেশ্বরীতলা এলাকায় একদল দুষ্কৃতী বোমা ছুড়তে ছুড়তে ঢোকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা মোট ছ’টি বোমা ছুড়েছিল। তার মধ্যে তিনটি বোমা ফাটে। বাকি তিনটি তাজা বোমা পুলিশ উদ্ধার করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৬ ০২:১৫
Share:

ক্ষতিগ্রস্ত মোটরবাইক।— নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ্য দিবালোকে বোমাবাজি ও গুলি চালানোর ঘটনা ঘটল শান্তিপুরে। সোমবার বিকেলে আগমেশ্বরীতলা এলাকায় একদল দুষ্কৃতী বোমা ছুড়তে ছুড়তে ঢোকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা মোট ছ’টি বোমা ছুড়েছিল। তার মধ্যে তিনটি বোমা ফাটে। বাকি তিনটি তাজা বোমা পুলিশ উদ্ধার করে। ফিরে যাওয়ার সময় তারা দু’রাউন্ড গুলিও চালায়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় একটি মোটরবাইকও। যদিও এই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি। তবে এলকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ দিন রাত পর্যন্ত ওই ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, এ দিন বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ মাতালগড় এলাকার সাত-আট জনের একটি দুষ্কৃতী দল হাঁটতে হাঁটতে পাড়ার ভিতরে ঢুকে পড়ে। সেই সময় আগমেশ্বরী মন্দিরের সামনে মাঠে খেলছিল একদল বাচ্চা। মাঠে তাস খেলছিলেন কয়েকজন প্রবীণ। আচমকা ওই দুষ্কৃতীরা থলের ভিতর থেকে বোমা বের করে রাস্তায় ছুটতে থাকে। বোমার শব্দে ছুটে আসেন এলাকার মানুষ। তাদের লক্ষ্য করেও বোমা ছোড়া হয়। কোনও রকমে বাচ্চাদের উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। ছুটে পালাতে গিয়ে কয়েকজন রাস্তায় পড়ে জখম হন। দুষ্কৃতীরা অবাধে বোমা ফাটিয়ে হেঁটে এলাকা ছেড়ে চলে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বেশ কয়েক দিন ধরে এলাকার কয়েকজন দুষ্কৃতী স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা চাইছিল। ব্যবসায়ীরা সেই টাকা দিতে অস্বীকার করায় দুষ্কৃতীরা এমন কাণ্ড করেছে। অভিযোগ, এই দুষ্কৃতীরা শান্তিপুর কলেজের ছাত্র সংসদের প্রাক্ত‌ন সাধারণ সম্পাদক টিএমসিপির মনোজ বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ। অভিযোগ অস্বীকার করে মনোজ সরকার বলেন,‘‘আগমেশ্বরী তলার ঘটনার সঙ্গে আমার কোন ছেলে জড়িত নেই। ওটা আসলে দুই পাড়ার মধ্যে গণ্ডগোল। চক্রান্ত করে আমার বিরুদ্ধে এই সব কথা রটানো হচ্ছে।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘আমার সংগঠনের এক ছাত্রকে ধরে আগমেশ্বরীতলার লোকজন ব্যাপক মারধর করেছে।’’

Advertisement

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, আগমেশ্বরীতলা এলাকার বাসিন্দা মন্টু নন্দীর সঙ্গে একসময় মনোজের ঘনিষ্ঠতা ছিল। মনোজবাবু বর্তমানে এলাকায় একটা ছোট লটারির দোকান চালান। জেলা পুলিশের একাংশের দাবি, এই লটারির ব্যবসা নিয়ে মন্টুর সঙ্গে মনোজের গোষ্ঠীর লোকজনের গণ্ডগোল হয়। তারা মন্টুর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চায়। কিন্তু মন্টুবাবু সেই টাকা দিতে অস্বীকার করায় এই হামলা। ঘটনার পরে রীতিমতো আতঙ্কিত মন্টু নন্দী বলছেন, ‘‘আমি আগে মনোজের সঙ্গে থাকতাম। কিন্তু এখন আমি ওদের থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে নিজের মতো করে লটারির ব্যবসা শুরু করেছি। কিন্তু ওরা সেটা ভাল ভাবে নিতে পারছে না।’’ মন্টুবাবুর দাবি, ‘‘রবিবার প্রায় ৪৭ হাজার টাকার ব্যবসা করেছি। সোমবার সকালে ওরা আমার কাছে টাকা চায়। আমি টাকা দিতে চাইনি। তখন ওরা আমাকে গুলি করবে বলে হুমকি দেয়। কিন্তু সত্যিই যে ওরা এমন করবে তা ভাবতে পারিনি।’’

আগমেশ্বরীতলার ইয়ং স্টাফ ক্লাবের সম্পাদক তথা স্থানীয় লটারির ব্যবসায়ী মদন বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমি দোকানের সামনে মোটরবাইকটা রেখে ছেলের সঙ্গে কথা বলছিলাম। সেই সময় মনোজের অনুগামী রাজা-বাপ্পা আমাদের লটারির দোকানগুলোকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়তে থাকে। ওদের বোমা ফেটে বাইকটা পুড়ে গিয়েছে। আমরা কোনও রকমে পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পাই।’’ তিনি জানান, খুব অল্পের জন্য একটা ছোট বাচ্চা রক্ষা পেয়ে গিয়েছে। দুষ্কৃতীদের কথা মতো টাকা না দেওয়ায় ওরা এমন হামলা করেছে।

ঘটনার তীব্র নিন্দা করে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা স্থানীয় বাসিন্দা সোমেন মাহাতো বলেন, ‘‘এটা তৃণমূলের সমাজবিরোধীদের গোষ্ঠীকোন্দল। গোটা রাজ্যের মতো শান্তিপুরেও এলাকা দখলের লড়াই শুরু হয়েছে। শহরের আইনশৃঙ্খলার কী হাল ভাবুন একবার! দিনে দুপুরে গুলি-বোমা নিয়ে যা শুরু হয়েছে তার মধ্যে পড়ে সাধারণ মানুষের প্রাণ যাবে।’’এমন অভিযোগ অস্বীকার করে শান্তিপুরের বিধায়ক তথা পুরপ্রধান তৃণমূলের অজয় দে বলেন, ‘‘শুনেছি দু’টো বোমা ফেটেছে। তেমন বিশেষ কিছু হয়েছে বলে আমার জানা নেই। হতে পারে টাকা পয়সা সংক্রান্ত কোন গণ্ডগোলের জের। এর মধ্যে আমাদের দলকে জড়ানোটা হাস্যকর। সিপিএম আসলে সব জায়গাতেই তৃণমূলের ভূত দেখছে।’’ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অজয় প্রসাদ বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত আমরা কোনও অভিযোগ পাইনি। তবে লটারির ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে এই ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন