পাল্লায় ভারী কন্যেরাই

গত দু’বছর ধরেই এই ধারা অব্যাহত। ২০১৭ সালে শতকরা ৬০ জন ছাত্রী ও ৪০ জন ছাত্র পরীক্ষা দিয়েছিল। গত বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ছিল ছিল শতকরা ৬১ ভাগ, ছাত্র ৩৯ ভাগ।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৬
Share:

ফারাকটা এ বারও চোখে পড়ার মতো। আজ, মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সিংহভাগই ছাত্রী।

Advertisement

জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, মুর্শিদাবাদের মাধ্যমিক ৮২,২২৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৫০,৩৫০ জন। তুলনায় ছাত্র সংখ্যা প্রায় অর্ধেক ৩১৮৭৮ জন। শতকরা হিসাবে ৬১ শতাংশ ছাত্রী এবং ছাত্র ৩৯ শতাংশ।

প্রশ্নটা তাই স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসছে, ছাত্র সংখ্যা ক্রমান্বয়ে এমন হ্রাস পাচ্ছে কেন?

Advertisement

গত দু’বছর ধরেই এই ধারা অব্যাহত। ২০১৭ সালে শতকরা ৬০ জন ছাত্রী ও ৪০ জন ছাত্র পরীক্ষা দিয়েছিল। গত বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ছিল ছিল শতকরা ৬১ ভাগ, ছাত্র ৩৯ ভাগ।

মাদ্রাসা বোর্ডের মাধ্যমিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে ফারকটা আরও কিছু বেশি। এ বছর সেখানে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতকরা ৬৯ ভাগ ছাত্রী। ছাত্র মাত্র ৩১ ভাগ।

লালগোলার লস্করপুর হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে প্রায় সমান সংখ্যক ছেলে ও মেয়ে ভর্তি হলেও এ বারের ২৮৪ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ২২৯ জন। ছাত্র মাত্র ৫৫ জন। এলাকার শেখালিপুর হাইস্কুল থেকে এ বার ৩৩২ ছাত্রী পরীক্ষা দেবে। ছাত্র ১৬৫ জন।

ফরাক্কার মহাদেবনগর পঞ্চায়েত এলাকায় আছে ধুলিয়ান হাইমাদ্রাসা। সেখানেও ১০৮৭ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ৮২২ জন। পঞ্চায়েত এলাকার বিপরীত ছবি অবশ্য পুর এলাকায়।

ধুলিয়ান পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাঞ্চনতলা জেডিজে ইনস্টিটিউশন। সেখানে ২৮০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জন ছাত্রী, বাকি ২৫০ জন ছাত্র।

এ ব্যপারে জেলার শিক্ষা-কর্তা, শিক্ষক এবং সমাজতত্ববিদদের ব্যাখ্যায় নানা মত মিলেছে।

ধুলিয়ান হাইমাদ্রাসার সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক রবিউল হক জেলার পরিচিত শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘এ প্রসঙ্গে অবশ্যই কন্যাশ্রী, সবুজ সাথীর কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে হয়। কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের নিয়মিত বাল্যবিবাহ রোখা অল্পবয়সী মেয়েদের মধ্যে পড়াশোনার একটা তাগিদ তৈরি করেছে। ফলে বাপ-মায়ের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতাকে তারা নিজেরাই রুখে দিয়ে
পড়তে চাইছে।’’

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী দে বিশ্বাসের কথাতেও সে যুক্তিই মিলেছে, ‘‘এর জন্য প্রধানত আর্থিক প্রতিকূলতাই দায়ী। বাধ্য হয়েই তাদের পড়াশোনায় ইতি টানতে হচ্ছে।’’

যুক্তিটা যে একেবারে ফেলনা নয়, মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় স্বল্পবয়সী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরিসংখ্যানেও সে তথ্য উঠে তথ্য এসেছে। ওই সংগঠনের পক্ষে জুলেখা খাতুন বলেন, ‘‘মেয়েদের পড়ার ইচ্ছে যেমন বেড়েছে, তেমনই রুজির টানে পড়ুয়া ছেলেদের জেলা ছেড়ে যাওয়ার ঘটনার সংখ্যাও যথেষ্ট।’’

তবে, গত বছরের তুলনায় এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪১০৫ জন কম। সে ব্যাখ্যা মিলেছে, মুর্শিদাবাদ জেলা মাধ্যমিক পরীক্ষা তদারকি কমিটি’র আহ্বায়ক, তথা পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি শেখ ফুরকানের কাছে।

তিনি দাবি করেছেন, ‘‘জেলায় ২০১৭ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অস্বাভাবিক সংখ্যক ছাত্রছাত্রী অকৃতকার্য হয়েছিল। তাদের প্রায় সবাই ২০১৮ সালে পরীক্ষা দিয়ে সাফল্য পেয়েছে। ফলে গত বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল বেশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন