মিরাজুল মল্লিক। নিজস্ব চিত্র
প্রায়ান্ধকার জগতে আলো বলতে ছিল শুধু ক্রিকেট। সেই ক্রিকেট মাঠেই অনুশীলন করার সময় মাথায় বল লেগে মৃত্যু হল বেঙ্গল ব্লাইড ক্রিকেট টিমের সদস্য, নবদ্বীপ এপিসি ব্লাইন্ড স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর পড়ুয়া মিরাজুল মল্লিকের (১৪)।
শনিবার শেষ বিকেলে মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে নবদ্বীপে। স্থানীয় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র ব্লাইন্ড স্কুলের মাঠে ক্রিকেট অনুশীলন করছিল ছাত্ররা। কয়েক দিন পরেই কৃষ্ণনগর হেলেন কেলার ব্লাইন্ড স্কুলের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ আছে নবদ্বীপ এপিসি ব্লাইন্ড স্কুলের। তারই প্রস্তুতি চলছিল। যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখন বল করছিল মিরাজুল। অন্য প্রান্তে ব্যাট করছিল নবম শ্রেণির পড়ুয়া সুমন ঘোষ। তার স্ট্রেট ড্রাইভ সোজা এসে লাগে নন স্ট্রাইকার এন্ডে থাকা মিরাজুলের ডান কানের উপর দিকে। মুহূর্তে মাঠেই লুটিয়ে পড়ে সে। মিরাজুলকে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। পরে কল্যাণীর জে এন এম হাসপাতালে। সেখানে শনিবার রাত ৯.১০ মিনিটে মৃত্যু হয় তার।
ধুবুলিয়ার নতুন নোয়াপাড়ার বাসিন্দা ফজলু মল্লিকের একমাত্র ছেলে মিরাজুল ৭৫ শতাংশ দৃষ্টিহীন হলেও ছোট থেকেই ক্রিকেট পাগল। নবদ্বীপ এপিসি ব্লাইন্ড স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে আবাসিক ছাত্র হিসাবে ভর্তি হওয়ার পর থেকে শুরু হয় নিয়মিত অনুশীলন। অলরাউন্ডার হিসাবে স্কুল টিমের নিয়মিত সদস্য হয়ে উঠতে বেশি দিন লাগেনি। পড়াশুনোর বাইরে তার সঙ্গী ব্যাট আর বল। কঠোর অনুশীলনে জেলা দলে নিজের জায়গা পাকা করে নেয় মিরাজুল। পরে সুযোগ পেয়েছিল রাজ্য দলে। সম্প্রতি কৃষ্ণনগরে আন্তঃজেলা ব্লাইন্ড ক্রিকেটে নদিয়াকে চ্যাম্পিয়ন করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা ছিল তার।
এমন অপ্রত্যাশিত মৃত্যুসংবাদে থমকে গিয়েছে নতুন নোয়াপাড়া। পেশায় নির্মাণ শ্রমিক বাবা ফজলু মল্লিক কেরালায় কর্মরত। খবর পেয়ে ফিরে আসছেন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর মা রোশনারা বেগম। ছোট দুই মেয়েকে কাছছাড়া করছেন না। কাকা সহিদুল মল্লিক জানান “সকলের ওকে নিয়ে অনেক আশা ছিল। এত ভাল খেলছিল। আমরা জানতাম এই ক্রিকেটই ওর ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে। এ ভাবে ওকে কেড়ে নেবে তা কে জানত।”
নবদ্বীপ এপিসি ব্লাইন্ড স্কুলের শিক্ষক ভিস্যুয়ালি ইম্পেয়ার্ড ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের সহ সভাপতি বাসুদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কী বলব কিছুই বুঝতে পারছি না। এ ভাবে খেলার মাঠে কোনও প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়ের মৃত্যু হয়েছে বলে আগে শুনিনি। কি ভাবে মিরাজুলের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো যায় আমরা সেই চেষ্টা শুরু করেছি।”